সম্প্রতি বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন পেয়েছে, যার নাম বাংলাদেশ মজলিস-জাস্টিস পার্টি (বিএমজেপি)। দলটির নাম ও পতাকায় ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির প্রভাব লক্ষণীয়। ভারতের জাতীয় পতাকা ও বিজেপির ছাঁদে তৈরি করা হয়েছে দলটির পতাকা। তবে নিবন্ধনপ্রাপ্ত হলেও দলটির কার্যক্রম, সংগঠন বা রাজনৈতিক কোনো উপস্থিতি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, যা নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক।
রাজধানীর ইন্দিরা রোডে বিএমজেপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় হিসেবে দেখানো হয়েছে একটি আবাসিক ভবনের ঠিকানা—৪৩/এ নম্বর বাড়ি। সরেজমিনে দেখা যায়, সেখানে দলের কোনো সাইনবোর্ড, ব্যানার বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের কোনো চিহ্ন নেই। স্থানীয় বাসিন্দারাও এ ভবনে রাজনৈতিক দলের কোনো কার্যক্রম কখনো দেখেননি। দলের সভাপতি সুকৃতি কুমার মণ্ডল দাবি করেন, নিচতলায় অফিস আছে, তবে তিনি বাসায় না থাকায় সেটি বন্ধ ছিল।
নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন শর্ত অনুযায়ী, একটি রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন পেতে হলে অন্তত একবার সংসদ নির্বাচনে জয়ী হতে হবে, অথবা গড়ে ৫ শতাংশ ভোট পেতে হবে, অথবা দেশের এক-তৃতীয়াংশ জেলায় কার্যকর অফিস ও কমপক্ষে ১০০টি উপজেলায় সক্রিয় সদস্য থাকতে হবে। বিএমজেপি এসব শর্ত কোনোটি পূরণ করেনি—এমন অভিযোগ উঠেছে। শুরুতে দলটিকে নিবন্ধন না দিলেও হাইকোর্টের নির্দেশে নির্বাচন কমিশন পরবর্তীতে তা প্রদান করে।
আইনজীবী এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, শর্ত পূরণ ছাড়াই নিবন্ধন দেওয়া হলে তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থাহীনতা তৈরি করে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থার মান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর ভাষায়, “একজন ব্যক্তি বা পরিবার শুধু নামমাত্র দল গঠন করে রাজনৈতিক পরিচয় নিতে চাইলে তা গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হতে পারে।”
বর্তমানে দেশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৫০টি। বিএমজেপিকে নিবন্ধন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা ও নিবন্ধন প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশের রাজনীতিকে কার্যকর ও জনগণনির্ভর করতে হলে দলীয় নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় আরও কঠোরতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা জরুরি।