মেটার স্বত্বাধিকারী ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মার্ক জাকারবার্গ গত জানুয়ারিতে এক ভিডিও বার্তায় ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও থ্রেডস থেকে তৃতীয় পক্ষ (থার্ড-পার্টি) ফ্যাক্ট চেকিং সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এবারে আমেরিকায় সেটাই কার্যকর করা হলো। গত ৭ এপ্রিল (সোমবার) থেকে মেটার মালিকানাধীন ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম ও থ্রেডসে ফ্যাক্ট চেকিং পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এর পরিবর্তে এক্স প্ল্যাটফর্মের অনুরূপ ‘কমিউনিটি নোটস’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এই সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোতে।
আমেরিকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ফ্যাক্ট চেকিং’ বন্ধ করে ‘কমিউনিটি নোটস’ চালুর বিষয়টি অবশ্য ক’দিন আগেই জানিয়েছিলেন মেটার চিফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার জোয়েল কাপলান। গত ৪ এপ্রিল নিজের এক্স অ্যাকাউন্টে তিনি এ সম্পর্কিত একটি পোস্ট করেন।
এক্সের পোস্ট করে কাপলান বলেন, ‘সোমবার বিকেল নাগাদ আমেরিকায় আমাদের ফ্যাক্ট-চেকিং প্রোগ্রাম আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হবে। এর মানে হলো নতুন করে আর কোনো ফ্যাক্ট-চেক হবে না এবং কোনো ফ্যাক্ট-চেকারও থাকবে না। আমরা জানুয়ারিতে ঘোষণা করেছিলাম যে, আমরা প্রোগ্রামটি গুটিয়ে নেব এবং শাস্তির বিধানও সরিয়ে নেব। ফ্যাক্ট-চেকের পরিবর্তে প্রথমদিককার কমিউনিটি নোটসগুলো পর্যায়ক্রমে ফেসবুক, থ্রেডস ও ইনস্টাগ্রামে দৃশ্যমান হতে শুরু করবে, যেখানে থাকবে না কোনো প্রকার শাস্তির বিধান।’
অর্থাৎ, তৃতীয় পক্ষ (থার্ড-পার্টি) দ্বারা স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকিং ব্যবস্থা তুলে নিয়ে সেখানে ‘কমিউনিটি নোটস’ পদ্ধতি চালু করা হয়েছে মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে। জানুয়ারিতে জাকারবার্গ তাঁর ভিডিও বার্তায়ও এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এতে করে কী সুবিধা হবে?
ই-মেইলে পাঠানো এক বিবৃতিতে মেটার একজন মুখপাত্র বলছেন, ‘আমরা বিশ্বাস করি এটি উন্নত একটি পদ্ধতি, যেটা তুলনামূলকভাবে কম পক্ষপাতদুষ্ট এবং সহজে সম্প্রসারণযোগ্য। সার্বিকভাবে আমরা আশা করি, বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির আরও বেশি সংখ্যক মানুষ বিভিন্ন ধরনের কনটেন্টে কনটেক্স বা প্রেক্ষাপট যুক্ত করবে…(এই পদ্ধতিতে) কোন কোন নোট লেখা হবে এবং সেগুলোর রেটিং কেমন হবে তা কমিউনিটি নির্ধারণ করে- মেটা নয়।’
তবে শুরুতেই কমিউনিটি নোটস পদ্ধতিটি নিখুঁত হবে, এমনটা আশা করছে না মেটাও। নতুন এই প্রক্রিয়াটি নিয়ে তাঁরা পরীক্ষানিরীক্ষা করছে এবং সময়ের সাথে সাথে কমিউনিটি নোটসকে আরও উন্নত করা হবে বলেই মেটার বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
মেটার তরফ থেকে আরও বলা হয়েছে যে, আগের রেটিং থেকে পুরোনো ফ্যাক্ট-চেকগুলো আমেরিকায় নতুন কনটেন্টের সাথে মেলানো হবে না। এছাড়া জানুয়ারি থেকে ফ্যাক্ট-চেক পেয়েছে এমন কনটেন্টগুলোর ওপর কোনো প্রকার শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। এছাড়া কমিউনিটি নোটস চালু হওয়ায় আমেরিকায় মেটার ব্যবহারকারীদের কনটেন্টে পুরোনো কোনো স্ট্রাইক বা নিষেধাজ্ঞা আর থাকবে না।
‘কমিউনিটি নোটস’ পদ্ধতিতে বিভ্রান্তিকর বা গোলমেলে বলে মনে হয় এমন পোস্টগুলোতে কনটেক্স যুক্ত করে দিতে পারবেন মেটার ব্যবহারকারীরা। কোন পোস্টে কনটেক্স যুক্ত করতে হবে সেটাও কমিউনিটির সদস্যরাই নির্ধারণ করবেন। ফলে তৃতীয় কোনো পক্ষের পক্ষপাতদুষ্ট হওয়ার কোনো সুযোগই থাকবে না এতে। তবে মেটা এও বলেছে যে, নতুন পদ্ধতিতে অ্যালগরিদমের উন্নয়নে সময় লাগবে।
মেটার প্ল্যাটফর্মগুলোতে আমেরিকায় ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধ হওয়ায় স্বাধীন ফ্যাক্ট-চেকারদের অনেকেই ইতোমধ্যে চাকরি হারিয়েছেন। আরও অনেকে চাকরি হারাতে চলেছেন। প্রাথমিকভাবে আমেরিকায় বন্ধ হলেও পর্যায়ক্রমে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধ করার পরিকল্পনা রয়েছে মেটার, যদিও ইউরোপে এমনটা করার ক্ষেত্রে আইনি বাধার সম্মুখীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছাকাছি যেতেই জানুয়ারিতে ফ্যাক্ট-চেকিং বন্ধের ঘোষণা দেন জাকারবার্গ। ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ ইলন মাস্কের এক্স প্ল্যাটফর্মে বেশ ক’বছর ধরেই চালু আছে কমিউনিটি নোটস।
আরও দেখুন
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
