মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারে সিন্ডিকেট গঠন করে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে সরকারি নির্ধারিত ফি’র চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি অর্থ আদায় ও তা পাচারের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী মোস্তফা কামালের রিক্রুটিং এজেন্সিসহ মোট ১২টি এজেন্সির বিরুদ্ধে পৃথক ১২টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলাগুলোতে অভিযোগ করা হয়েছে, এসব এজেন্সি ৬৭ হাজার শ্রমিকের কাছ থেকে ১ হাজার ১৭৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে।
দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন মঙ্গলবার (১১ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, প্রাথমিক তদন্তে এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে সরকারি ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, শ্রমিকদের টিকিট সরবরাহে ব্যর্থতা এবং অর্থ পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠে এসেছে।
২০২২ সালের আগস্টে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার পুনরায় খোলার পর বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ৫ লাখ ৩২ হাজারের বেশি কোটা বরাদ্দ করা হয়। এর মধ্যে ৪ লাখ ৭৬ হাজার শ্রমিক তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হলেও প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ জন নির্ধারিত সময়ের আগে টিকিট না পাওয়ায় মালয়েশিয়ায় যেতে পারেননি। এ ঘটনায় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটির প্রতিবেদনে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর অনুমতিপ্রাপ্ত ১০০টি বেসরকারি রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়ী করা হয়েছে।
দুদকের তদন্তে উঠে এসেছে, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো সরকারি ফি’র চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে এবং তা পাচারের মাধ্যমে বিশাল অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করেছে। এজেন্সিগুলোর অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির কারণে ২০২৪ সালের ৩১ মে’র মধ্যে নির্ধারিত সময়সীমার আগে প্রায় ১৭ হাজার ৭৭৭ জন কর্মীকে মালয়েশিয়ায় পাঠাতে ব্যর্থ হয় তারা। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের পরিবারগুলোর মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ও হতাশা ছড়িয়ে পড়েছে।
দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন জানান, মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিয়েছে দুদক। এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো দ্রুত বিচার কার্যক্রমে এগিয়ে নেওয়া হবে এবং দোষীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। তিনি আরও বলেন, “শ্রমিকদের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎকারীদের বিরুদ্ধে আমরা শূন্য সহনশীলতা নীতি অনুসরণ করব।”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানোর প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সে লক্ষ্যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রম কঠোরভাবে মনিটরিং করা হবে। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে।
এ ঘটনায় শ্রমবাজারে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা আবারও সামনে এসেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমিকদের নিরাপদ ও ন্যায্য অভিবাসন নিশ্চিত করতে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। এজন্য রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন জরুরি।
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজারের সিন্ডিকেট ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা দেশের দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে একটি উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত শ্রমিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর কঠোর পদক্ষেপ জরুরি। শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও তাদের স্বপ্ন পূরণে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা এখন সময়ের দাবি।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।
