মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পাসপোর্ট হাতে পেতে প্রবাসীদের গলদঘর্ম। মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও অনেক প্রবাসী কর্মী পাসপোর্ট হাতে পাচ্ছে না। অভিযোগ উঠেছে,যেসব প্রবাসী কর্মী দালাল চক্রের মাধ্যমে ৩শ’ থেকে ৪শ’ রিংগিট বকশিস দিবে তারা দ্রুত পাসপোর্ট পাচ্ছে। মালয়েশিয়ায় কর্মরত প্রবাসী কর্মী এমডি বাবু শেখ, গাজী আমিনুর, এমডি দেলোয়ার হোসাইন, পার্থ সুমন ও তারা মিয়া গত আগস্ট সেপ্টেম্বর মাসে নতুন পাসপোর্টের জন্য আবেদন জমা দিয়েও হাইকমিশনে ধরনা দিয়েও পাসপোর্ট পাচ্ছে না। দালাল চক্রের সাথে হাইকমিশনের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশ রয়েছে বলেও ভুক্তভোগীদের অভিযোগ। হাইকমিশনের কাউন্সেলর (পাসপোর্ট) মিয়া কেয়ামউদ্দিনের হাতে পাসপোর্ট আনতে গিয়ে জনৈক প্রবাসী কর্মী হেনস্তার শিকার হবার পরেও তার বিরুদ্ধে আজো দৃশ্যত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতে দেশের ভাবমর্যাদা চরমভাবে ক্ষুণ হয়েছে। এনিয়ে দেশটিতে কর্মরত প্রবাসীদের মাঝে অসন্তোষ বিরাজ করছে। মিয়া কেয়ামউদ্দিন ফ্যাসিস্ট হাসিনার আর্শীবাদে ২০২১ সালের এপ্রিল মাসে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে যোগদান করেন। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হাইকমিশনার মো.শামীম আহসান এখনো বহাল তবিয়তে। ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর হাসিনার আস্থাভাজন শামীম আহসান মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনার হিসেবে যোগদান করেন। ফ্যাসিবাদী সৈ¦রাচারী সরকারের আমলে দলীয় পরিচয়ে নিযুক্ত কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে চরম উদাসীনতা ও গাফলতির দরুন প্রবাসী কর্মীরা যথাযথ সেবার পরিবর্তে অহরহ বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। একাধিক সূত্র এতথ্য জানিয়েছে।
ঐতিহাসিক জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদের পতন হলেও কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনে ফ্যাসিবাদের দোসররা বহাল থাকায় প্রবাসীদের হয়রানি ও ভোগান্তি দিন দিন বাড়ছে। হাইকমিশনের পাসপোর্ট ও ভিসা বিভাগ দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। এমআরপি পাসপোর্ট হাতে পেতে অনেক প্রবাসীকে ঘুষ গুণতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভুক্তভোগীরা এতথ্য জানিয়েছেন। হাইকমিশনের ফ্যাসিবাদের দোসররা অসাধু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বাঁচাতে কারণ দর্শানোর নোটিশ ধামাচাপা দিয়ে অনৈতিক লেনদেনের মাধ্যমে কালো টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি এমন দিকে গড়াচ্ছে যে হাইকমিশনের সাধারণ একজন কর্মচারী মাসে যে পরিমাণ বেতন ভাতাদি পান তার দ্বিগুণ তিনগুণ অর্থ দেশে বিদেশে পাঠাচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। কেউ কেউ হুন্ডির মাধ্যমেও আত্মীয়-স্বজনের কাছে টাকা পাঠাচ্ছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাইকমিশনের অফিস সহকারী সাইফুর রহমান ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৪ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বেতন ভাতাসহ অন্যান্য সুবিধাদি নিয়ে আয় করেছেন ৪১ লাখ ১৯ হাজার ৫৬৩ টাকা। আর ২০২২ সালের ৭ মার্চ থেকে ২০২৪ সালের ১২মে পর্যন্ত সাইফুর রহমান দেশে টাকা পাঠিয়েছেন ৭৫ লাখ টাকা। তিনি বেতনের আয় ছাড়া অতিরিক্ত অর্থ কোথায় পেয়েছে তা’জানা যায়নি। উল্লেখ্য, ফরেন এ্যালাউন্স ব্যতীত তার বেসিক বেতন ১৩ হাজার ৩৮০ টাকা। যেসব কর্মকর্তা তিন বছর থেকে চার বছর হাইকমিশনে কর্মরত তাদের সম্পদের হিসাব নেয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি সূত্র এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
হাইকমিশনের টাস্কফোর্স অসাধু বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিলেও নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হলেও অজ্ঞাত কারণে খোদ হাইকমিশনার শামীম আহসান অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তার টেবিলে মাসের পর মাস ফাইল চাপা দিয়ে রেখেছেন। এতে হাইকমিশনের টাস্কফোর্স বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চরমভাবে ক্ষুব্ধ। এ ব্যাপারে গতকাল শনিবার কুয়ালালামপুরস্থ হাইকমিশনার শামীম আহসানের মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
হাইকমিশনের অসাধু ও বিতর্কিত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানো নোটিশের ব্যাপারে কোনো আইনগত ব্যবস্থা না নিয়ে ফাইল ধামাচাপা দেয়ার প্রতিবাদে সচেতন প্রবাসীরা হাইকমিশনারের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, হাইকমিশনের টাস্কফোর্সের গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ২৬ সেপ্টেম্বর ও ২৩ অক্টোবর মনজিল হোসেন রাতুল এবং কাউন্সেলর (পাসপোর্ট) মিয়া মো. কেয়ামউদ্দিনের নামে দুটি শোকজ নোটিশ ইস্যু করা হয়। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় উক্ত নোটিশগুলোর উত্তর আপনার টেবিলে ফাইলবন্দি অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের কোনো উদ্যোগ এখনো লক্ষ্য করা যায়নি। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা সত্ত্বেও, আপনার নীরবতা এবং ধামাচাপা দেওয়ার প্রবণতা অত্যন্ত হতাশাজনক। এই উদাসীনতার পুরো দায়ভার আপনার উপর বর্তায়। আপনি যদি দ্রুত এই বিষয়টিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ না করেন, তবে আপনার দায়িত্বশীল অবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। আপনার তাৎক্ষণিক এবং কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছে প্রবাসীরা। এ ঘটনার পরেও টনক নড়েনি ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর হাইকমিশনার শামীম আহসানের।
জানা গেছে, মালয়েশিয়ার বাংলাদেশ হাইকমিশনের পাসপোর্ট বিভাগের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সেবাপ্রত্যাশী প্রবাসী কর্মীরা জিম্মি। পাসপোর্ট অনুমোদন, সংশোধন ও বিতরণের ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি করেন তারা। সময় মতো পাসপোর্ট না পেয়ে ভিসাসহ নানা হয়রানির শিকার হচ্ছেন প্রবাসীরা। হাইকমিশনের পাসপোর্ট অনুবিভাগের কার্যক্রম সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে বলে হাইকমিশনের অফিস সহকারী মনজিল হোসেন (রাতুল) এক চাঞ্চল্যকর অডিওতে উল্লেখ করেছেন। অডিওতে হাইকমিশনের পাসপোর্ট সিন্ডিকেটের সাথে কাউন্সেল (পাসপোর্ট) মিয়া কেয়ামউদ্দিনের নামও উঠে এসেছে। হাইকমিশনের পাসপোর্ট বিভাগ থেকে পাসপোর্ট সরবরাহে বাহিরের দালালদের সাথে রাতুল চক্রের সম্পৃক্ততা রয়েছে। রাতুলের সাথে ফ্যাসিস্ট সরকারের একাধিক মন্ত্রীর সখ্যতা ছিল। এ ব্যাপারে হাইকমিশনের কাউন্সেলর (রাজনৈতিক) ও দূতালয় প্রধান প্রণব কুমার ভট্টাচার্য্য ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত মনজিল হোসেন রাতুলের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করেন। উল্লেখিত দু’টি কারণ দর্শানোর নোটিশের কার্যকারিতা হাইকমিশনার নিজেই আটকে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post