ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীর হলদিবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা মিরানা মাহজাবিন সরকার গত বছরের ২০ নভেম্বর তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য ঠাকুরগাঁও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আবেদন করেন। আবেদনের ৯ দিন পর মিরানা মাহজাবিন সরকার পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে গেলে সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদ তার কাছে পাসপোর্ট নবায়ন করতে সরকারি ফির অতিরিক্ত ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন।
অতিরিক্ত অর্থ দাবির বিষয়টি নিয়ে অফিসের প্রধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম মামুনের শরণাপন্ন হন ভুক্তভোগী মিরানা মাহজাবিন। সহকারী পরিচালক ফারুক আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধান করার পরামর্শ দেন।
পরবর্তীতে মিরানা মাহজাবিন সরকারের মুঠোফোনে পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদের কথোপকথন হয়। ফের ফারুক আহমেদ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে কোনো উপায় না পেয়ে ভুক্তভোগী ওই নারী ঠাকুরগাঁও সমন্বিত দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কার্যালয়ে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুদকের একটি বিশেষ টিম গঠন করা হয়। ৫০ হাজার টাকার প্রথম কিস্তি হিসেবে মঙ্গলবার ২০ হাজার টাকা দেওয়ার কথা বলে মুঠোফোনে ফারুক আহমেদকে ডেকে নেন ওই নারী। দুপুরে পৌরশহরের বাজারপাড়া এলাকায় ২০ হাজার টাকা নেওয়ার সময় ছদ্মবেশে থাকা দুদকের একটি দল তাকে হাতেনাতে ধরে। টাকাসহ আটকের পর ফারুক আহমেদকে পাসপোর্ট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম মামুন ৫ হাজার টাকা ভাগ চেয়েছেন বলে দুদককে জানান তিনি।
পাসপোর্ট অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় মাসখানেক আগে ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক হিসেবে যোগদান করেন ফারুক আহমেদ। ফারুক আহমেদের বাড়ি নওগাঁ জেলায়। তবে একটি সূত্রের দাবি ফারুক আহমেদকে ফাঁসানো হয়েছে। তিনি এমন কাজ করতে পারেন না। নিশ্চয় বড় কোনো কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত আছেন।
এ ঘটনার পর পাসপোর্ট অফিসে সেবা নিতে আসা সাধারণ জনগণের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকেই বলেন, দীর্ঘদিন ধরে অফিসে ঘুষ ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ ছিল, যা এই ঘটনার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। স্থানীয়রা দুদকের এই অভিযানের প্রশংসা করেছেন এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার আহ্বান জানান।
তবে ঘুষের টাকার ভাগ চাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য যোগাযোগ করা হয় ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম মামুনের সঙ্গে। তিনি প্রতিবেদককে মুঠোফোনে জানান, কয়েকদিন আগে মিরানা মাহজাবিন সরকার নামে এক নারী তার পাসপোর্ট নবায়ন করতে আমার কাছে এসেছিলেন। আমি অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদের কাছে পাঠিয়ে দেই। পরবর্তীতে তাদের মধ্যে লেনদেন হয়েছে কিনা আমি জানি না। আজ দুপুরে জানতে পারি দুদক নাকি ঘুষের টাকা গ্রহণের সময় হাতেনাতে তাকে আটক করেছে।
ঘুষের টাকা ভাগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো টাকা চাইনি। ফারুক হয়তো চাপে পরে আমার নাম বলেছে। আমি টাকা লেনদেনের ব্যাপারে কিছুই জানি না।
তবে এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি অভিযোগকারী মিরানা মাহজাবিন সরকার। সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে তিনি সরে যান। আর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদ জেলে থাকায় তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে দুদকের ঠাকুরগাঁও জেলা সমন্বিত কার্যালয়ের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক জানান, ভুক্তভোগী মেহজাবিন সরকার, যিনি পাসপোর্ট নবায়নের জন্য আবেদন করেছিলেন। তিনি ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি দুদককে জানালে এই অভিযান পরিচালিত হয় এবং পাসপোর্ট অফিসের সহকারী হিসাবরক্ষক ফারুক আহমেদকে আমরা হাতেনাতে আটক করি। দুদকের পক্ষ থেকে ফারুক আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি জেলে আছেন।
তার ঘুষ গ্রহণের সাথে আরও কেউ জড়িত আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে দুদকের এই কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারি পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক জাহিদুল ইসলাম মামুনের কথা। তিনি নাকি টাকার ভাগ চেয়েছিলেন। তবে এখনই বিস্তারিত কিছু বলা যাচ্ছে। ফারুক আহমেদের সঙ্গে কারা কারা জড়িত, কে টাকার ভাগ চেয়েছেন তার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করা যাবে না।
এর আগেও ঠাকুরগাঁও পাসপোর্ট অফিসের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তবে এটি প্রথমবারের মতো সরাসরি অভিযানের মাধ্যমে প্রমাণিত হলো।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post