বাংলাদেশের জ্বালানি তেল পরিবহন খাতে এক নতুন যুগের সূচনা হতে চলেছে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনের মাধ্যমে তেল পরিবহন কার্যক্রম শুরু হলে প্রতিবছর ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে।
ইতোমধ্যে ২৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পাইপলাইন স্থাপনের কাজ সম্পন্ন হয়েছে, এবং সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী মার্চ মাসেই এ লাইনের মাধ্যমে তেল ঢাকায় পৌঁছাতে শুরু করবে। এ মাধ্যমে জ্বালানি পরিবহনে নতুন মাইলফলক স্পর্শ করবে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তাদের মতে, এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেশের জ্বালানি তেল পরিবহন খরচ কমাতে এবং সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও নিরবচ্ছিন্ন ও কার্যকর করতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি, পরিবেশদূষণও উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম থেকে নদী ও সড়কপথে তেল পরিবহন করা হয়, যা প্রায়ই নানা কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। এই সড়ক ও নদীপথে পরিবহনে খরচ বেশি হয় এবং তেল চুরির ঘটনাও ঘটে। শুষ্ক মৌসুমে নদীপথের নাব্যতা কমে যাওয়ায় তেল পরিবহন আরও জটিল হয়ে পড়ে।
এসব সমস্যার সমাধানে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ‘চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত পাইপলাইনে জ্বালানি তেল পরিবহন’ প্রকল্পটি অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি ২০২০ সালে শুরু হয়, এবং পরবর্তীতে দুটি দফায় মেয়াদ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে এটি শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
এই প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ছিল ২ হাজার ৮৬১ কোটি টাকা, যা পরবর্তীতে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় ৩ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড।
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের বার্ষিক চাহিদা ৬৫ লাখ টন হলেও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৬৭ লাখ টন তেল সরবরাহ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৭৫ শতাংশই ডিজেল। ঢাকা বিভাগে মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ তেল ব্যবহৃত হয়।
বর্তমানে, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে নদীপথে তেল নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও ফতুল্লা ডিপোতে নিয়ে আসা হয়, এবং সেখান থেকে সড়কপথে ঢাকায় পরিবহন করা হয়, যা প্রতি মাসে প্রায় ১৫০টি ছোট-বড় জাহাজ ব্যবহারের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এই পুরো পরিবহন কার্যক্রমে প্রতিবছর খরচ হয় ২০০ কোটি টাকা।
পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু হলে প্রতিবছর ৩২৬ কোটি টাকা আয় হবে, এবং পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ বিলসহ অন্যান্য খাতে ৯০ কোটি টাকা খরচ হবে। ফলে প্রতিবছর ২৩৬ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, এবং প্রকল্পটির বিনিয়োগ আগামী ১৬ বছরের মধ্যে উঠে আসবে।
বিপিসির প্রকল্প পরিচালক মো. আমিনুল হক জানিয়েছেন, ডিসেম্বরেই নির্মাণকাজ শেষ হবে। এরপর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম (কমিশনিং) শুরু হবে, এবং জানুয়ারির মধ্যে প্রকল্পের কমিশনিং সম্পন্ন হবে। সবশেষে মার্চ মাসে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পাইপলাইনে তেল পরিবহন শুরু হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post