‘ব্যাগেজ রুলস’ ব্যবহার করে বিদেশ থেকে স্বর্ণ আমদানির নিয়মে আসছে পরিবর্তন। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এবং কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই নিয়মের অপব্যবহার রোধে নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, বর্তমানে নির্ধারিত কর দিয়ে স্বর্ণ আমদানি বৈধ হলেও একটি চক্র এই নিয়মকে কাজে লাগিয়ে স্বর্ণ চোরাচালানে লিপ্ত।
নতুন বিধিনিষেধ ও পরিকল্পনা
ঢাকা কাস্টমস হাউসের যুগ্ম কমিশনার মো. আল-আমিন জানিয়েছেন, বর্তমান নিয়মে একজন যাত্রী একবারে একটি স্বর্ণের বার (ওজন ১১৬/১১৭ গ্রাম) আনতে পারেন, যার জন্য ৪০ হাজার টাকা কর নির্ধারিত। তবে যাত্রী বছরে কতবার এই সুবিধা নিতে পারবেন, তা নির্দিষ্ট করা হয়নি। এর ফলে ফ্রিকোয়েন্ট ফ্লায়ারদের একটি গোষ্ঠী নিয়মিতভাবে স্বর্ণ আমদানি করছেন, যা পরে চোরাচালানের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশে পাচার করা হয়।
কাস্টমসের প্রস্তাবিত পরিবর্তনে বছরে কতবার একজন যাত্রী স্বর্ণ আনতে পারবেন তা নির্ধারণ করা হবে। এ জন্য একটি আধুনিক সফটওয়্যারও চালু করা হবে, যা প্রতিটি যাত্রীর তথ্য সংরক্ষণ করবে। এতে দেশের যে কোনও বিমানবন্দর দিয়ে প্রবেশ করলেও যাত্রীর আগের রেকর্ড ট্র্যাক করা যাবে।
নতুন নিয়মের সম্ভাব্য প্রভাব
কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আশা করছেন, এই পরিবর্তন স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেট ভাঙতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিনহাজ উদ্দিন বলেছেন, “ব্যাগেজ রুলসের নতুন নিয়ম দেশে স্বর্ণ চোরাচালান বন্ধে যুগোপযোগী পদক্ষেপ। গত কয়েক বছরে দেশে আসা স্বর্ণের একটি বড় অংশ বিদেশে পাচার হয়েছে। এই বিধিনিষেধের ফলে এমন ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে।”
সিন্ডিকেট ও চোরাচালান চিত্র
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ঘিরে গড়ে ওঠা স্বর্ণ চোরাচালানের সিন্ডিকেটে শতাধিক ব্যক্তি নিয়মিতভাবে যুক্ত। এদের বেশিরভাগই দুবাই ও সৌদি আরব থেকে স্বর্ণ আমদানি করে স্থানীয় ‘মহাজনদের’ কাছে হস্তান্তর করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা প্রতিটি স্বর্ণের বারের জন্য ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ করেন। বিশেষ করে মুন্সীগঞ্জের বিক্রমপুর এলাকায় এই সিন্ডিকেটের প্রভাব সবচেয়ে বেশি।
আইনের প্রয়োগ ও ভবিষ্যৎ
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসির উদ্দিন সম্রাট বলেছেন, “কোনো আইনের কার্যকারিতা তার সঠিক প্রয়োগে নির্ভরশীল। নতুন ব্যাগেজ রুলস যদি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে তা চোরাচালান রোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।”
এনবিআর চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নতুন নিয়ম কার্যকরের মাধ্যমে কাস্টমস ব্যবস্থাকে আরও আধুনিক ও স্বচ্ছ করার উদ্যোগ নিয়েছেন। উড়োজাহাজে মালিকবিহীন স্বর্ণ পাওয়া গেলে সেটি বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ব্যাগেজ রুলসে এই পরিবর্তন চোরাচালান রোধে কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সংশ্লিষ্টরা আশাবাদী, এই উদ্যোগ দেশের স্বর্ণ চোরাচালানের দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post