ভারতের বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে দেশটির গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা চলছে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার, তার উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি এবং কূটনৈতিক ব্যর্থতার কারণে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের ঐতিহ্যবাহী সুসম্পর্কের অবনতি ঘটিয়েছে। সম্প্রতি, ভারতের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের আলোচনায় এসব বিষয় উঠে এসেছে।
আলোচনায় উল্লেখ করা হয়, ভারতের ঐতিহ্যবাহী পঞ্চশীলা নীতি—যা পারস্পরিক শ্রদ্ধা, আক্রমণ না করা, অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা, সমতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত—মোদি সরকারের শাসনামলে অবহেলিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিজেপি এবং আরএসএস এখন একটি আগ্রাসী হিন্দুত্ববাদী ভারত গড়তে চায়, যা ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও তিক্ত হয়েছে, বিশেষ করে কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর। সীমান্ত সংঘর্ষ এবং কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব এখন একে অপরকে অনুসরণ করা ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। চীনের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধও উত্তপ্ত হয়েছে। লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষ এবং চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব ভারতের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে, যা শীতল যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছে।
এছাড়া, ভারতীয় ভূটান সম্পর্কও অবনতির দিকে। একসময় ঘনিষ্ঠ মিত্র রাষ্ট্র ভূটান এখন চীনের প্রতি কৌশলগত মনোভাব গ্রহণ করছে, যা ভারতের জন্য কূটনৈতিক পরাজয় হিসেবে গণ্য হচ্ছে। নেপালের সঙ্গে সীমান্ত বিরোধ এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপের কারণে নেপালি জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা দুই দেশের ঐতিহাসিক সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মালদ্বীপে, চীনপন্থী প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জুর ক্ষমতায় আসার পর ভারতের প্রভাব কমেছে। শ্রীলঙ্কায় চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং মার্কসবাদী কমিউনিস্টদের পুনরায় ক্ষমতায় আসা ভারতের কূটনৈতিক অবস্থানকে আরও দুর্বল করেছে। বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর সম্পর্ক জটিল হয়ে উঠেছে, আর আফগানিস্তানে তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার প্রচেষ্টা থেকেও ভারত কার্যত সফল হয়নি।
ভারতীয় গণমাধ্যমের মতে, পঞ্চশীলা নীতি মেনে চললে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সম্ভব হতো। কিন্তু আরএসএস প্রভাবিত মোদি সরকারের উগ্র হিন্দুত্ববাদী নীতি এবং অদূরদর্শিতার কারণে ভারত এখন চারপাশে শত্রু তৈরি করছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post