পূর্বে নেপাল, পশ্চিমে বাংলাদেশ এবং মাঝখানে ভারতের একটি সংকীর্ণ করিডর, যা ম্যাপের ওপর দেখতে মুরগির ঘাড়ের মতো। এ অঞ্চলটি পরিচিত “চিকেন নেক” নামে। মাত্র ৬০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ২২ কিলোমিটার প্রশস্ত এই শিলিগুড়ি করিডর ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে দেশের মূল ভূখণ্ডের সংযোগ স্থাপনকারী প্রধান পথ।
চিকেন নেক শিলিগুড়ি, মাটিগাড়া, নকশালবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, চোপড়া ও ইসলামপুরের অংশজুড়ে বিস্তৃত। এটি শুধুমাত্র উত্তর-পূর্ব ভারতের জীবনরেখা নয়, বরং নেপাল এবং ভুটানের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই করিডরের ওপর নির্ভর করেই তারা বিশ্বের অন্যান্য অংশের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে।
চিকেন নেক থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে তিব্বতের চুম্বি উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনীর ঘাঁটি রয়েছে। আকাশপথে এই দূরত্ব মাত্র কয়েক মিনিটের। কৌশলগতভাবে এই অঞ্চলে চীনের দখলদারিত্বের ইচ্ছা বহু পুরনো। চিকেন নেক ভারতের জন্য জাতীয় নিরাপত্তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চিকেন নেকের দখল চীনের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। এই করিডর দখল করা সম্ভব হলে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তরবঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এ কারণে শিলিগুড়ি করিডর রক্ষায় ভারত এখানে ব্যাপক সামরিক ও বিমানবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে।
ভারত এই অঞ্চলে বাগডোগরা ও হাসিমারায় দুটি বিমানঘাঁটি তৈরি করেছে। করিডরের পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্ত সুরক্ষিত রাখতে এগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৭ সালে দোকলাম সীমান্ত উত্তেজনার সময় ভারত শিলিগুড়ি করিডরে বিপুল সেনা মোতায়েন করে। একই সঙ্গে চীনও তাদের সেনাশক্তি বৃদ্ধি করে চুম্বি উপত্যকা থেকে আকাশপথে শিলিগুড়ি করিডরের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা চালায়।
বাংলাদেশের জন্যও এই চিকেন নেক গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্ত এলাকায় এর ভৌগোলিক ও কৌশলগত অবস্থান শুধু ভারতের নয়, প্রতিবেশী দেশগুলোর জন্যও প্রভাব বিস্তারকারী। মুরগির ঘাড় তুলনামূলক দুর্বল বলে ধরে নেওয়া হয়। চুম্বি উপত্যকা থেকে আসা বার্তা এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতের ওপর চাপ প্রয়োগের বার্তাও এই অঞ্চলের গুরুত্বকে বাড়িয়ে তুলেছে।
চিকেন নেক করিডর শুধুমাত্র একটি ভৌগোলিক অঞ্চল নয়, এটি ভারত ও এর প্রতিবেশীদের জন্য রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় এই অঞ্চলটি ভবিষ্যতে আরও বেশি গুরুত্ব পাবে বলে ধারণা করা যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন news@probashtime.com মেইলে।

Discussion about this post