বিদেশে শ্রম দিয়ে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা প্রবাসীরা দেশে ফিরে অপমান ও হয়রানির শিকার হচ্ছেন—এমন অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি তা আরও তীব্রতর হয়েছে। দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের অসৌজন্যমূলক আচরণে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা প্রতিনিয়ত অভিযোগ করছেন।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দরসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ তল্লাশির নামে সময়ক্ষেপণ, সন্দেহের চোখে দেখা এবং প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিজ্ঞাসাবাদ—এসবই প্রবাসীদের জন্য হয়ে উঠেছে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতা। সৌদি ফেরত এক প্রবাসী বলেন, দীর্ঘ ফ্লাইট শেষে দেশে ফিরেই কাস্টমসে অপমানজনক আচরণে পড়তে হয়েছে। ব্যাগ তল্লাশির সময় তাকে এমনভাবে দেখা হচ্ছিল যেন তিনি কোনো অপরাধী।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ ধরনের অসন্তোষপূর্ণ অভিজ্ঞতা নিয়ে প্রবাসীদের পোস্টের সংখ্যা বাড়ছে। বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার অভিযোগ জমা পড়ে, যার মধ্যে অন্তত ১০ শতাংশ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আচরণ ও লাগেজ হ্যান্ডলিং সংক্রান্ত। চট্টগ্রামের বিমানবন্দরেও গত তিন বছরে ২০ জনের বেশি প্রবাসী অনৈতিক ফি আদায়ের অভিযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন
আইন ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিমানবন্দর একটি রাষ্ট্রের মুখচ্ছবি। সেখানে প্রবাসীদের সঙ্গে সম্মানহানিকর আচরণ শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয় দায়িত্ববোধের অভাবও নির্দেশ করে। তাঁর মতে, কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ, সিসিটিভি মনিটরিং জোরদারকরণ এবং পৃথক অভিযোগ নিষ্পত্তি ইউনিট গঠন এখন সময়ের দাবি।
বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স আসে। এ আয়ের নায়ক এই প্রবাসীরা। অথচ দেশে ফিরলে তাঁরা অনেক সময় সম্মান তো পানই না, উল্টো বিড়ম্বনার শিকার হন। এক প্রবাসীর কথায়, “দেশে ফেরা মানেই যেন দোষী হিসেবে হাজিরা দেওয়া।” তাই প্রবাসীদের সম্মান ও অধিকার রক্ষায় অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি বলে মনে করছেন সচেতন মহল।