কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং উনচিপ্রাং গ্রামের ১৫ বছর বয়সী মো. রেদোয়ান বাড়ি ছেড়েছিলেন নতুন জীবনের স্বপ্ন নিয়ে। স্থানীয় একটি এনজিওতে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজেকে দক্ষ করে তোলার উদ্দেশ্য ছিল তার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ তো হয়নি, বরং পরিবারের কাছে আজও তার কোনো খোঁজ নেই।
চার মাস ধরে নিখোঁজ রেদোয়ানের পরিবারের দাবি, একটি দালাল চক্র তাকে এনজিও প্রশিক্ষণের কথা বলে বাড়ি থেকে নিয়ে যায়। পরে সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠানোর নাম করে পরিবারের কাছ থেকে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের টাকা। একই কায়দায় নিখোঁজ হন ওই গ্রামের আরও দুই কিশোর—১৪ বছর বয়সী মো. দেলোয়ার হোসেন ও ১৬ বছরের মো. রাসেল। তিনজনই নিখোঁজ প্রায় চার মাস ধরে।
রেদোয়ানের বাবা শামসুল আলম জানান, জীবিকা নির্বাহের জন্য চিংড়ি ঘেরে কাজ করলেও পরিবারে অর্থকষ্ট লেগেই আছে। এর মধ্যেই ছেলেকে এনজিও প্রশিক্ষণের কথা বলে দালাল চক্রের সদস্য আবুল কালাম, মো. ইব্রাহিম ও নুর হোসেন টেকনাফে নিয়ে যায়। পরে খবর আসে, তাদের সাগর পথে মালয়েশিয়া পাঠানো হচ্ছে। প্রতিজনের জন্য দুই দফায় চার লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা দেওয়ার পরেও সন্তানদের আর কোনো খোঁজ মেলেনি।
আরও পড়ুন
আরেক ভুক্তভোগী মা রোকেয়া বেগম বলেন, “চার মাস ধরে আমার ছেলে দেলোয়ারের জন্য অপেক্ষা করছি। চোখের পানি শুকিয়ে গেছে। কলিজার টুকরা কোথায় আছে জানি না। শুধু জানি—দালালদের ধোঁকায় পড়ে সে নিখোঁজ হয়ে গেছে।”
এ ঘটনায় কক্সবাজার আদালতে দুটি মামলা দায়ের করেছে পরিবার। মামলাগুলোর তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। টেকনাফ মডেল থানাতেও পৃথক অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অভিযুক্ত দালালরা ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে, তাদের মোবাইল নম্বরও বন্ধ।
টেকনাফ মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, “মানব পাচারসহ নানা অপরাধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। উনচিপ্রাংয়ে কিশোর নিখোঁজের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”