খুলনার দিঘলিয়ার সাবেক ছাত্রদল নেতা আ ন ম মুরাদ হোসেন এক সময় ছিলেন সংগঠনের সক্রিয় কর্মী। ১৯৯৮ সালে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি ওয়াহিদুজ্জামান চঞ্চল নিহত হলে তিনি রাজনৈতিকভাবে চাপে পড়েন। সেই সময় মায়ের অনুরোধে তার ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী জাহিদ হোসেন মিল্টনের সহায়তায় সৌদি আরব পাড়ি জমান। সেখানে ফেডেক্স কুরিয়ার সার্ভিসে চাকরি নেন এবং প্রবাসজীবনে কষ্টার্জিত অর্থ নিয়মিত পাঠাতে থাকেন বাংলাদেশে, তার স্ত্রী মাহফুজা সুলতানা খালেদার কাছে।
স্ত্রী ছিলেন তার আপন খালাতো বোন, যাকে তিনি ভালোবেসে বিয়ে করেন। পরিবারে বিয়েটির অনুমোদন না থাকলেও দাম্পত্য জীবনের প্রথমদিকে মুরাদ ছুটি নিয়ে দেশে এসে পরিবার নিয়ে সুখেই সময় কাটাতেন। তার পাঠানো অর্থে স্ত্রী ঢাকায় দুটি দোকান, খুলনায় ১০ বিঘা জমি এবং গোপালগঞ্জে আরও ১ বিঘা জমি কেনেন। এসব সম্পত্তি সবই স্ত্রীর নামে রেজিস্ট্রি করা হয়।
২০১৭ সালে দেশে স্থায়ীভাবে ফিরে আসার পরপরই মুরাদের জীবনে পরিবর্তন আসে। স্ত্রীর আচরণ বদলে যেতে থাকে, সন্তানরাও তাকে গুরুত্ব না দিয়ে দূরে সরতে শুরু করে। একপর্যায়ে অর্থ ও সম্পত্তি নিয়ে দাম্পত্য কলহ তীব্র আকার ধারণ করে। অবহেলা আর অপমানের মধ্যে ৪ বছর কাটিয়ে হতাশ হয়ে তিনি ফিরে আসেন দিঘলিয়ার পৈতৃক ভিটায়।
আরও পড়ুন
মানসিক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হন এবং জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতির পদ লাভ করেন। কিন্তু ফেসবুকে একটি রাজনৈতিক পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে একটি পুরোনো খুনের মামলায় তাকে জড়িয়ে দুইবার জেলে যেতে হয়। প্রতিবারই তার ছোট ভাই মিল্টন চেষ্টা করে জামিনে মুক্ত করেন। এরপর একে একে চারবার ব্রেন স্ট্রোক করে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন।
বর্তমানে ৫৮ বছর বয়সী মুরাদ স্মৃতিশক্তি, অনুভূতি এবং শারীরিক সক্ষমতা হারিয়ে এক নির্জন ঘরে একাকী দিন কাটাচ্ছেন। ছোট ভাই মিল্টন জানান, তার ভাই এখন নিজে থেকে কিছু বুঝতে পারেন না, টয়লেট ব্যবস্থাও নিয়ন্ত্রণে নেই। এমন অবস্থায় কেউ তার সেবায় থাকতেও চায় না। চিকিৎসকেরা বলছেন, ভালো নার্সিং ও সেবায় তার অবস্থার উন্নতি সম্ভব, তবে তা নিশ্চিত করার মতো অবস্থা এখন আর কারও নেই।