নাটোরের বড়াইগ্রামে এক শিশু হত্যার রহস্য ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই উদ্ঘাটন করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে মহিষভাঙ্গা ইউনিয়নের বনপাড়া পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনের কাছে নির্মাণাধীন একটি মসলা মিলের খোলা মাঠ থেকে মিনহাজ হোসেন আবির (১০) নামে এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরদিন শুক্রবার সন্ধ্যায় পুলিশ জানায়, মোবাইল গেম খেলা নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে তারই এক বন্ধু আবিরকে হত্যা করেছে।
নিহত আবির ছিল স্থানীয় বনপাড়া আদিব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র এবং কাতারপ্রবাসী মিলন হোসেনের একমাত্র সন্তান। অভিযুক্ত শিশু, বয়স ১২ বছর, একই এলাকার বাসিন্দা এবং একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। ঘটনার দিন বিকেলে আবির তার বাবার স্মার্টফোন ও সাইকেল নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে আর ফেরেনি। সন্ধ্যায় নিখোঁজ ডায়েরি করা হলে, রাতেই মসলা মিলের পাশে রক্তমাখা সাইকেল ও স্যান্ডেল খুঁজে পায় স্বজনরা। পরে গাছের শুকনো পাতার নিচে লুকিয়ে রাখা আবিরের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
বড়াইগ্রাম সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শোভন চন্দ্র হোড় জানান, পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্ত শিশু স্বীকার করেছে, তারা একসঙ্গে মোবাইলে ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম খেলছিল। খেলাকে কেন্দ্র করে তর্কাতর্কির একপর্যায়ে সে রাগে পাশের ইট দিয়ে আবিরের মাথায় আঘাত করে। ঘটনাস্থলেই মারা যায় আবির। পরে শিশুটি মরদেহ গাছের পাতার নিচে লুকিয়ে মোবাইল নিয়ে পালিয়ে যায়। শুক্রবার সকালে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেওয়া তথ্যমতে মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন
বড়াইগ্রাম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার হোসেন জানান, মামলার অগ্রগতির অংশ হিসেবে অভিযুক্ত শিশুকে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আবিরের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শুক্রবার বিকেলে বনপাড়া পৌরসভার মহিষভাঙ্গা কবরস্থানে আবিরের দাফন সম্পন্ন হয়। ঈদের ছুটিতে দেশে ফেরা আবিরের বাবা মিলন হোসেন ছেলের মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন। আবেগভরে তিনি বলেন, “ছেলেকে জড়িয়ে সময় কাটাতে দেশে এসেছিলাম, ভাবিনি এটাই শেষ দেখা হবে। মোবাইল গেমের আসক্তি, এক মুহূর্তের রাগ, আমার বুক থেকে সন্তান কেড়ে নিয়েছে। আমি কিছু চাই না, শুধু চাই—আর কোনো বাবা যেন সন্তান হারিয়ে না কাঁদে। সন্তানদের মোবাইলের আসক্তি থেকে রক্ষা করতে হবে এখনই। সন্তানকে সময় দিন, ভালোবাসুন—সুযোগ হারালে আর ফেরত আসে না।”