ফরিদপুরে এক নারী পাটকল শ্রমিককে সুন্দরবনে ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভনে ফেলে ভারতে পাচার ও বিক্রির দায়ে দুই নারী সহকর্মীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। বুধবার (১৮ জুন) দুপুরে ফরিদপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শামীমা পারভীন এই রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার সময় দুই আসামিই পলাতক ছিলেন, তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বৈশাখালী গ্রামের আমীর আলীর মেয়ে মাকসুদা বিবি (৪৮) এবং একই উপজেলার আটিরোপর এলাকার মতিয়ার পালের মেয়ে মর্জিনা ওরফে সোনালী (৩৮)। আদালত সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালের ৮ মে কৌশলে ভুক্তভোগী তরুণীকে ‘গ্রামে বেড়াতে’ এবং ‘সুন্দরবন ঘুরতে’ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মাকসুদা তার সঙ্গে নিয়ে যান এবং পাচারকারী চক্রের হাতে তুলে দেন।
পরবর্তীতে ভারতের কলকাতার একটি যৌনপল্লিতে অভিযান চালিয়ে ওই তরুণীকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ। পরে বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সহায়তায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। ফরিদপুর কোতোয়ালি থানায় ভুক্তভোগীর মা বাদী হয়ে মানবপাচার আইনে মামলা করেন। তদন্তে উঠে আসে, শুধু মাকসুদা নন, চক্রের আরেক সদস্য মর্জিনা ওরফে সোনালীও এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন। ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত শেষে তাদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা এসআই আবুল খায়ের।
আরও পড়ুন
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর গোলাম রব্বানী ভূঁইয়া জানান, মামলায় সাতজন সাক্ষীর জবানবন্দির ভিত্তিতে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। আদালতের এই রায়ের মাধ্যমে মানবপাচারের মতো জঘন্য অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত বার্তা দেওয়া হলো।
তবে রায়ে কিছুটা হতাশা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীর পরিবার ও মামলায় আইনি সহায়তা প্রদানকারী বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী পরিষদের সদস্য শামসুন্নাহার নাইম। তিনি বলেন, অভিযুক্তরা একটি সংঘবদ্ধ চক্রের সদস্য, যারা বিভিন্ন কল-কারখানায় চাকরির আড়ালে নারী শ্রমিকদের টার্গেট করে পাচারের ফাঁদে ফেলে। তিনি বলেন, “আমরা আশা করেছিলাম তাদের ফাঁসি হবে, যাতে এমন অপরাধের বিরুদ্ধে সমাজে কঠোর বার্তা যায়।”