সুনামগঞ্জের জগন্নাথপুর উপজেলায় দীর্ঘ ৫০ বছরের আইনি লড়াইয়ের পর প্রায় সাড়ে ২২ একর জমির মালিকানা ফিরে পেয়েছেন যুক্তরাজ্যপ্রবাসী রেদওয়ানুল হকের উত্তরসূরীরা। আদালতের নির্দেশে মঙ্গলবার (২১ মে) সংশ্লিষ্ট জমির দখল বুঝিয়ে দেয় উপজেলা প্রশাসন।
জানা গেছে, ১৯৭৫ সালের ২৫ জুন শ্রীরামসি গ্রামের বাসিন্দা রেদওয়ানুল হক একই গ্রামের আব্দুল মোতালিব খাঁন ও আব্দুল মনির খাঁ গংদের বিরুদ্ধে মালিকানা দাবিতে সিলেটের প্রথম সাবজজ আদালতে একটি স্বত্ব বাটোয়ারা মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলা সুনামগঞ্জে স্থানান্তর হলে বহু পর্যায়ে শুনানি ও আপিলের পর ২০০৭ সালে চূড়ান্ত রায় তাদের পক্ষে আসে।
রায় কার্যকরে জটিলতা দেখা দিলে রেদওয়ানুল হক পরবর্তী সময়ে স্বত্বজারী ও দখলদেহী মামলা দায়ের করেন। বিবাদীপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করলে তা স্থগিত থাকে দীর্ঘদিন। শেষ পর্যন্ত ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের মাধ্যমে মামলার নিষ্পত্তি হয়। সেই রায়ের ভিত্তিতে জমি দখলের আবেদন করলে আদালত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে জমি বুঝিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন।
আরও পড়ুন
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী জগন্নাথপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞার নেতৃত্বে পুলিশ ও প্রশাসনের উপস্থিতিতে উত্তরসূরীদের কাছে জমি হস্তান্তর করা হয়। এ সময় লাল কাপড়ে মোড়ানো খুঁটি ও সীমানা পিলার স্থাপন করে জমির সীমা চিহ্নিত করা হয়। উক্ত জমির মধ্যে বসতভিটা, পতিত জমি এবং দীঘির মতো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিও রয়েছে।
প্রয়াত রেদওয়ানুল হকের ছেলে এমদাদুল হক টিপু জানান, “আমার বাবা জীবদ্দশায় এই সম্পদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মামলা করেন। আজ ৫০ বছর পর সেই ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠা পেয়েছে—এটা আমাদের জন্য খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।” তিনি আইনি লড়াইয়ে সহযোগিতাকারী বিচারক, আইনজীবী ও প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিয়াদ বিন ইব্রাহিম ভূঞা বলেন, “দীর্ঘ অপেক্ষার পর সম্পদের প্রকৃত মালিকদের হাতে জমি তুলে দিতে পেরে আমরা সন্তুষ্ট। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অন্যায়ের প্রতিকার সম্ভব এবং জোর করে কারো সম্পদ চিরদিন দখলে রাখা যায় না।”