বাংলাদেশ সরকার ভারতে চারটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ইউটিউবে ব্লক করে দেওয়ায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব এই ঘটনায় ইউটিউবের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। শুক্রবার রাতে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক পোস্টে তিনি উল্লেখ করেন, ইউটিউব ভারত বাংলাদেশের অন্তত চারটি টিভি স্টেশনকে জিও ব্লক করেছে। সম্প্রচার মাধ্যমের ভৌগোলিক অবস্থান হিসেবে বাংলাদেশকে ব্লক করায় ভারতে বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিক যারা নিয়মিত এই চ্যানেলগুলো দেখেন, তাদের অধিকার ক্ষুণ্ন হচ্ছে। তিনি মনে করেন, এই ধরনের পদক্ষেপ ভোক্তা অধিকারের আন্তর্জাতিক রীতির পরিপন্থী।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আরও জানান, সরকার ইউটিউবের কাছে এর সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইবে এবং সন্তোষজনক উত্তর না পেলে পাল্টা পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি ডিসমিসল্যাব নামক একটি তথ্য যাচাইকারী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যমুনা টিভি, একাত্তর টিভি, বাংলাভিশন ও মোহনা টেলিভিশন বর্তমানে ভারতে ইউটিউবে দেখা যাচ্ছে না। প্ল্যাটফর্মটিতে এই চ্যানেলগুলোর ভিডিওতে একটি বার্তা দেখাচ্ছে যেখানে বলা হচ্ছে, জাতীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার ভিত্তিতে সরকারি নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকায় ভিডিওটি এই দেশে প্রদর্শনের জন্য অনুমোদিত নয়। ডিসমিসল্যাব ভারতে একটি প্রক্সি সংযোগ ব্যবহার করে বাংলাদেশের ৩৮টি সংবাদভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল যাচাই করে এবং কেবল এই চারটি চ্যানেলকেই ব্লকড অবস্থায় পায়। দিল্লি ও কলকাতার সাংবাদিকরাও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি আইন, ২০০০-এর ৬৯(ক) ধারা অনুযায়ী, জাতীয় নিরাপত্তা ও জনশৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সরকারের নির্দিষ্ট কনটেন্ট ব্লক করার অধিকার রয়েছে। তবে, বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে ভারতে তথ্য নিয়ন্ত্রণের একটি প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগে, ৯ মে ভারতের স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়্যার-এর ওয়েবসাইটও ব্লক করে দেওয়া হয়। তার আগের দিন দেশটির সরকার আট হাজারের বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশ দেয়।
আরও পড়ুন
এই প্রেক্ষাপটে, বাংলাদেশের চারটি টেলিভিশন চ্যানেল ব্লক করার ঘটনা দু’দেশের মধ্যেকার তথ্য আদান-প্রদান এবং জনগণের তথ্য জানার অধিকারের ক্ষেত্রে একটি উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ইউটিউবের কাছে এর কারণ জানতে চাওয়া এবং প্রয়োজনে পাল্টা পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলতে পারে।