বিশ্বব্যাপী করোনার তাণ্ডব চলছে। দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে এ ভাইরাস। প্রতিদিনই দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল, আক্রান্তও হচ্ছে লাখে লাখে। মহামারি এ ভাইরাসের নতুন নতুন ধরন মানুষের মনে আতঙ্ক বাড়িয়ে দিয়েছে। করোনার টিকা আবিষ্কার হলেও এখনও আতঙ্কে বিশ্ববাসী। এদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে গত কয়েকদিন যাবত আক্রান্ত কিছুটা নিম্নমুখী থাকলেও মৃতের সংখ্যা আজও ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
বুধবার (২৮-এপ্রিল) ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুসারে দেশটিতে আজ নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ৯২৮ জন এবং মৃতের সংখ্যা ৯ জন। গতকালের তুলনায় আজ আক্রান্ত কমেছে ২০০ জন। দেশটিতে আজ আক্রান্ত এবং আইসিইউতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা সন্তোষজনক হারে কমেছে।
বর্তমানে আইসিইউতে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২৭৫ জন। যা গতকাল ছিলো ২৮৩ জনে। এখন পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৯২ হাজার ৩২৬ জন। অপরদিকে মোট সুস্থের সংখ্যা ১ লাখ ৭১ হাজার ৮৪৮ জন। আজ ৯ জনের মৃত সহ মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ১ জন। গত ২৪ ঘন্টায় নতুন সুস্থের সংখ্যা ৯১৯ জন।
আজ দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে নতুন ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৯৯ জন। এখন পর্যন্ত দেশটির বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আছেন ৮৩৩ জন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিতে ওমান সরকারের সকল নির্দেশনা মেনে চলতে নাগরিক এবং প্রবাসীদের অনুরোধ জানিয়েছে ওমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। অন্যথায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছে ওমান সুপ্রিম কমিটি।
এদিকে ভারতজুড়ে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস। দেশটিতে সংক্রমণের শীর্ষে রাজধানী দিল্লি। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ২৪ হাজার ১৪৯ জন। মঙ্গলবার এই সংখ্যা নেমেছিল ২০ হাজারে। দিল্লিতে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।
সংক্রমণের পাশাপাশি মৃত্যুও বেড়েছে সে রাজ্যে। বুধবার গত ২৪ ঘণ্টায় দিল্লিতে মৃত্যু হয়েছে ৩৮১ জনের, যা করোনাপর্বে সর্বোচ্চ। এদিকে শবদাহের জায়গা ফুরিয়ে যাওয়ায় ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লিতে অসংখ্য অস্থায়ী চিতা বসানো হচ্ছে। রাজ্যটিতে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েই চলছে। শহরের পৌর সংস্থা ও সাতটি শ্মশানে ঘুরে দিল্লিভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল এনডিটিভি জানায়, করোনায় সরকারি মৃত্যুর হিসাবে অন্তত এক হাজার ১৫০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়নি।
দিল্লি পৌরসভা পরিচালিত ২৬টি শ্মশান থেকে তথ্য নেওয়া হয়েছে। এতে দেখা গেছে, ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিলের মধ্যে তিন হাজার ৯৬ জন করোনা রোগীর মরদেহ এসব শ্মশানে দাহ করা হয়েছে। এদিকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ইনসাইডার ডট কম জানাচ্ছে দিল্লির এই করোনা পরিস্থিতি চিন্তার কারণ হয়েছে রাজধানীর সবথেকে বড় কবরস্থানের। পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, যেখানে করোনায় মৃ্ত্যু হলেও শেষকৃত্য নিয়ে ভাবতে হচ্ছে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের।
দিল্লিতে অন্যতম বড় কবরস্থান জাদিদ আহলে ইসলাম ক্রিমেটরি। বহু বছর ধরে মুসলিম সমাজের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এই নাম। এবার সেই কবরস্থানেই পাওয়া যাচ্ছে না দাফনের জায়গা। কবরস্থানের কেয়ারটেকার মহম্মদ শামিম বলেন, কোথায় ৭ থেকে ৮ জনকে কবর দেয়া আর কোথায় ৩০ থেকে ৪০ জনকে কবর দেয়া।
আমি ৩৫ বছর ধরে এখানে আছি এত মৃতদেহ কখনো দেখিনি। আমার বাবা আছে এখানে উনিও এত মৃতদেহ কখনো দেখেননি। আসলেই খুব খারাপ অবস্থা। করোনার আসার আগে আমাদের কাজ করতে কোন কষ্ট হতো না। এটা স্বাভাবিক কাজ ছিল। কখনো কখনো কোন সালে ডবল কাজ করতে হতো। আর এখন ডবল ট্রিপল না রাতদিন খাটতে হচ্ছে। আর কবর খুঁড়তে হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমি কখনোই কল্পনা করিনি এমন দিন আমাকে দেখতে হবে যে দিনে ৪০টি লাশ দাফন করতে হবে। করোনায় মৃতদের জন্য যে জায়গা বরাদ্দ ছিল তা পূর্ণ হয়ে গেছে। এখন কবরস্থানের কমিটির সঙ্গে কথা বলে নতুন জায়গার কথা ভাবতে হবে আমাদের। গত ৪ এপ্রিল থেকে কবরস্থানে কোভিডে মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post