করোনা মহামারির মধ্যে বাংলাদেশের পুলিশ বাহিনী নিজেদের দায়িত্বের বাহিরে থেকেও অনেক মানবিক কাজ করে সাধারণ জনগণের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। এবার দেশের বাহিরে একজন অসহায় প্রবাসীর পাশে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ। তাদের এমন কাজে বেশ সাড়া ফেলেছে প্রবাসীদের মাঝে।
‘স্যার, দয়া করে আপনারা আমাকে সহায়তা করুন। আমি এখানে মরতে চাই না। স্যার আমি যদি এখানে মারা যায়, বেওয়ারিশ লাশ হয়ে ফ্রিজে পড়ে থাকতে হবে। স্যার তাই আমার এই আকুতি মিনতি,,, ধন্যবাদ স্যার।’
বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজের ইনবক্সে মোহাম্মদ ইব্রাহীম নামে এক ব্যক্তি সহযোগিতা চেয়ে এভাবেই পোস্ট করেন। সেই পোস্টে সাড়া দিয়ে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পিআর উইং ওই ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায়। সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে দেশে ফিরেন দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে অসুস্থ থাকা ওই বাংলাদেশি। শনিবার (১০ এপ্রিল) পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স কর্মকর্তা মো. সোহেল রানা সাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি মোহাম্মদ ইব্রাহীম (২৫) নামে এক সৌদি আরব প্রবাসী এক বাংলাদেশি নাগরিক বাংলাদেশ পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং পরিচালিত বাংলাদেশ পুলিশ অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে জানান তিনি সৌদি আরব প্রবাসী। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ। অর্থের অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। দেশেও ফিরতে পারছেন না। তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করতে তিনি বাংলাদেশ পুলিশের সহযোগিতা চান।
এদিকে, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং তার বার্তাটি দেখার সাথে সাথেই তার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে বাংলাদেশে তার ঠিকানায় যোগাযোগ করে। তার নিজ বাড়ি কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানা। টেকনাফ থানার মাধ্যমে তার পরিবার ও স্থানীয় লোকদের সাথে যোগাযোগ করা হয়।
সংশ্লিষ্টদের দাবি, তিনি পবিত্র ওমরাহ পালন করতে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। ওমরাহ পালন শেষে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। সেখানে থেকে যেতে বাধ্য হন। এক পর্যায়ে সেখানে তিনি অবৈধ হয়ে যান। অসুস্থ শরীরে তিনি লুকিয়ে বেড়াচ্ছিলেন।
বৈধ কাগজপত্রের অভাবে তিনি কোথাও মুভ (যেতে) করতে পারছিলেন না। এক পর্যায়ে ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়লে তিনি বেঁচে থাকার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন। সেই মুহূর্তে কারো পরামর্শে তিনি বাংলাদেশ পুলিশ ফেসবুক পেজের ইনবক্সে সহযোগিতা চেয়ে বার্তা পাঠান। এমনকি দীর্ঘ এক বছরের অধিক সময় ধরে অসুস্থ ছিলেন ইব্রাহীম।
তার অসুস্থতা ও অসহায়ত্বের বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে মানবিক কারণে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া অ্যান্ড পিআর উইং তার পাশে দাঁড়ায়। তার বিষয়টি নিয়ে বিসিএস পররাষ্ট্র ক্যাডারের পরিচিত এক কর্মকর্তা মোস্তফা জামিলের সঙ্গে পরামর্শ করে তার সহযোগিতা চান।
মোস্তফা জামিল নিজেও অপর একটি দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে কর্মরত। তার পরামর্শ ও সহযোগিতায় অসুস্থ বাংলাদেশি নাগরিকের সঙ্গে সৌদি আরবে বাংলাদেশ দূতাবাসের যোগাযোগ করিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশ দূতাবাসের সহযোগিতায় দ্রুততম সময়ে বৈধ ট্রাভেল ডকুমেন্টস পেয়ে যান মোহাম্মদ ইব্রাহীম। অবশেষে, গত ৯ এপ্রিল রাতে দেশে ফিরেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের মিডিয়া এন্ড পাবলিক রিলেশন্স উইং বাংলাদেশ পুলিশের ফেসবুক পেজের ইনবক্সে পাঠানো নাগরিকগণের বার্তা মনিটর করে প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ, বিপিএম (বার) এর নেতৃত্বে বাংলাদেশ পুলিশকে একটি জনবান্ধব পুলিশ বাহিনীতে রূপান্তর করতে কাজ করছে পুলিশ হেডকোয়ার্টার্স।
পুলিশের এমন কাজের প্রশংসা করে ফিরোজ আহমেদ বাপ্পি নামে একজন বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ। আর্তমানবতার এগিয়ে আসার জন্য পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাই।” এম এইচ মিঠু নামে আরেকজন বলেন, “এভাবে যদি সকল অসহায় প্রবাসীদের সহযোগীতা করা সম্ভব হত তাহলে অনেক ভালো হতো। ধন্যবাদ বাংলাদেশ পুলিশ কে এই কাজগুলোর জন্য।”
নুরুল হক নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, “বিদেশে যতগুলি মিশন আছে প্রত্যেকটিতে দুজন পুলিশ অফিসার দেয়ার দরকার, যদি দেয়া হয় তাহলে আমাদের প্রবাসী ভাইদের অনেক উকার হবে।” এভাবেই সবাই প্রশংসা করছেন পুলিশের এমন মানবিক কাজে। সবার একটাই প্রত্যাশা, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী সবসময় এভাবেই অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post