রাতের আধারে থাকবে কৃত্রিম চাঁদ, থাকবে উড়ন্ত ট্যাক্সির ব্যবস্থা। বাড়িঘর পরিষ্কারের কাজ করবে রোবট। পুরো শহর হবে কার্বনমুক্ত। ৩৩টি নিউইয়র্কের সমান দীর্ঘ বিলাসবহুল এই শহরটির রাস্তায় চলবেনা কোনো গাড়ি। পুরো শহরে দূষণের চিহ্নমাত্র থাকবে না! বিলাসবহুল জীবনযাপনের সব উপকরণই মিলবে সৌদি আরবের এই নিঅম শহরটিতে। এমন উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের বাস্তবায়ন শুরু করেছে সৌদি আরব।
যুবরাজ জানিয়েছেন, শহরে যানবাহন এবং রাস্তা না থাকলেও পথচারীদের জন্য অত্যাধুনিক পাথওয়ে বা হাঁটার জায়গা থাকবে। অতি দ্রুত যে পাথওয়ের সাহায্যে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যাবে।
মেগা এই শহরের নাম দেওয়া হয়েছে ‘নিঅম’। সৌদি আরবের কর্তৃপক্ষই একে বর্ণনা করেছে বিশ্বের সবচেয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্প হিসাবে। দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল এলাকা জুড়ে লোহিত সাগরের তীরে গড়ে উঠছে সেটি।
নির্মাতাদের দাবি, প্রায় ৩৩টি নিউইয়র্কের সমান হবে নতুন এই শহরের আকার। নিঅম প্রকল্পের আওতায় শহরের মধ্যে থাকবে আরেকটি শহর। ১০০ মাইল দীর্ঘ বিলাসবহুল এই এলাকাকে ডাকা হবে ‘দ্য লাইন’ নামে।
সেখানে বসবাস করতে পারবেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান জানিয়েছিলেন, বিলাসবহুল এ প্রকল্পের কাজ ২০২৫ সালে শেষ হতে পারে।
জ্বালানি তেলের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে সৌদি আরবের আর্থ-সামাজিক পরিবর্তনে যুবরাজ সালমান যে ‘ভিশন ২০৩০’ পরিকল্পনা নিয়েছেন, তারই অংশ হিসেবে তৈরি হচ্ছে নিঅম শহর। লোহিত সাগরের তীরে ২৬ হাজার ৫০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা জুড়ে ‘নিঅম’ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সৌদি সরকার। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার।
নিঅম-এর ওয়েবসাইটে শহরটি সম্পর্কে বলা হয়েছে: রাতের বেলা নিঅমের আকাশে থাকবে বিশাল কৃত্রিম চাঁদ। আসল চাঁদের মতোই তার আলোয় আলোকিত হয়ে থাকবে গোটা এলাকা। সেখানে কৃত্রিম মেঘ তৈরির প্রযুক্তি থাকবে। এর মাধ্যমে মরুভূমির বুকেও শহরটিতে ইচ্ছামতো বৃষ্টিপাত ঘটানো হবে।
লেখাপড়ার জন্য থাকবে হলোগ্রাফিক শিক্ষক, যেমনটা বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীতে দেখা যায়। নিঅমে তৈরি হচ্ছে জুরাসিক পার্কের মতো একটি দ্বীপও, যেখানে রোবট ডাইনোসরের দেখা পাওয়া যাবে। সৌদি সরকার বলছে, নিঅমের মানুষজন উড়ন্ত ট্যাক্সিতে চলাফেরা করবেন। তাদের বাড়িঘর পরিষ্কার করে দেবে রোবট।
দৃষ্টিনন্দন করা জন্য লোহিত সাগরের সৈকতেও অনেক পরিবর্তন আনা হবে। পরিকল্পনা অনুসারে, সেখানকার সৈকতগুলোতে রাতের বেলা বালু জ্বলজ্বল করবে। সৌদি যুবরাজের ইচ্ছা, প্রযুক্তির দিক থেকে নিঅম হবে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির মতো, বিনোদনের দিক থেকে হলিউড আর অবসর কাটানোর জন্য ফ্রেঞ্চ রিভিয়েরার মতো।
শহরের ‘নিঅম বে’ এলাকায় এরই মধ্যে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে গেছে। এটিকে প্রথম দফার প্রকল্প বলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে নিঅম বিমানবন্দরের কাজ শেষ হয়েছে এবং সেটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বীকৃতিও পেয়েছে। জানা গেছে, নিঅম শহরের নিয়মকানুনও সৌদি আরবের অন্য এলাকাগুলোর থেকে কিছুটা আলাদা হবে। সেখানকার আইনি ব্যবস্থা সরাসরি সৌদি বাদশাহর কাছে দায়বদ্ধ থাকবে।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের তথ্যমতে, যে এলাকায় নিঅম শহর গড়ে তোলা হচ্ছে, সেখানে সৌদি হুয়াইত গোষ্ঠীর প্রায় ২০ হাজার মানুষ বসবাস করেন। শহরটির জন্য তাদের ওই এলাকা থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ‘ভবিষ্যতের শহর’-এর জন্য হুয়াইত গোষ্ঠীর মানুষের ভবিষ্যৎ ঠিকানা কোথায় হবে, তা এখনও পরিষ্কার নয়।
আরো পড়ুনঃ
ওমানের সুরে চাকরীর সুযোগ
সহজে ই-পাসপোর্ট করবেন যেভাবে
কুয়েতে ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ফ্লাইট চালু
ওমানে সম্পূর্ণ চালু অবস্থায় বিক্রি হবে একটি সুপার মার্কেট
মিথ্যা সংবাদ প্রকাশকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিবে ওমান
বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, নিঅম প্রকল্প নির্মাণে সৌদি আরবে ব্যাপক কর্মযজ্ঞ চলছে। সৌদি কর্তৃপক্ষের ঘোষণা অনুযায়ী, দ্যা লাইন শহর তৈরির কার্যক্রম শুরু হবে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে। বাংলাদেশের যেসব প্রতিষ্ঠান বিদেশে শ্রমিক পাঠিয়ে থাকে, তাদের আশা এই প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সৌদি আরবে বাংলাদেশি শ্রমিকদের আরও চাহিদা তৈরি হবে।
বাংলাদেশের রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাশার গনমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে যেসব শ্রমিক যায়, তাদের বেশিরভাগই নির্মাণ শ্রমিক বা পরিচ্ছন্নতা কর্মী হিসাবে যায়। কিন্তু যে মেগা প্রজেক্টটি সৌদি সরকার বানাচ্ছে, সেখানে অনেক টেকনিক্যাল কর্মী দরকার বলে তিনি জানান।
”বাংলাদেশ থেকে কিছু নির্মাণ শ্রমিক সেখানে কাজ করছে। কিন্তু টেকনিক্যাল কাজের বেশি সুযোগ পাচ্ছে ভারত, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপিন্সের লোকজন। তবে আমরা আশা করছি, শহরটি নির্মাণ শেষ হওয়ার পর সেখানে আমাদের শ্রমিকদের কাজের কিছু সুযোগ তৈরি হবে।”
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post