আশ্রয় আবেদন বাতিল হওয়া বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে হওয়া ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন ডিল বা দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় এসব বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠাবে ব্রিটিশ সরকার।
সম্প্রতি দেশ দুটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে এই চুক্তি সই হয়। এর ফলে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন খারিজ হওয়া, অপরাধী এবং ভিসার মেয়াদ পার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সহজ হবে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সরকার।
চুক্তি অনুযায়ী দুই দেশ তাদের অংশীদারত্ব জোরদার করার পাশাপাশি অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক বিষয়ে সহযোগিতা ক্ষেত্র তৈরিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
যুক্তরাজ্যের ভিসার অপব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের নাম বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। তাই দুই দেশের দ্রুত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় তাদের ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্য।
তথ্য বলছে, ২০২৩ সালের মার্চ মাস থেকে এ বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত এক বছরে ১১ হাজার বাংলাদেশি ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে। যারা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছে তাদের মাত্র ৫% আবেদন সফল হয়েছে।
ব্রিটিশ সরকার বলছে, শিক্ষার্থী, কর্মী বা ভিজিটর ভিসা নিয়ে এসব বাংলাদেশিরা এসেছে। ব্রিটেনে স্থায়ী হতে তারা “পেছনের দরজা” ব্যবহারের চেষ্টা করছে।
স্থায়ী হতে কানাডায় গিয়ে চাকরি না পাওয়ার হতাশায় বাংলাদেশিরাস্থায়ী হতে কানাডায় গিয়ে চাকরি না পাওয়ার হতাশায় বাংলাদেশিরা
এদিকে যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের যুক্তরাজ্য সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং যুক্তরাজ্যের ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ক মন্ত্রী অ্যান-মেরি ট্রেভেলিয়ানের মধ্যে সাম্প্রতিক এক বৈঠকের ভিত্তিতে ওয়ার্কিং গ্রুপটি তৈরি হয়েছে।
ওই সময় বাংলাদেশর প্রধানন্ত্রী শেখ হাসিনা জানিয়েছেন, অনিয়মিত অভিবাসনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের “জিরো টলারেন্স” বা “শূন্য সহনশীলতা” নীতি রয়েছে। ওই সময় ফাস্ট-ট্র্যাক রিটার্ন চুক্তিতেও সম্মতি দেন বাংলাদেশের সরকারপ্রধান।
যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকের বিষয়ে যুক্তরাজ্যের অনিয়মিত অভিবাসন বিষয়ক মন্ত্রী মাইকেল টমলিনসন বলেন, “অনিয়মিতভাবে আসা বা থাকা বন্ধ করার জন্য ডিপোর্ট বা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াকে গতিশীল করা আমাদের পরিকল্পনার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
বাংলাদেশ আমাদের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার এবং এটি একটি দারুণ বিষয় যে আমরা তাদের সঙ্গে প্রত্যাবাসনকে গতিশীল করাসহ আরো বিভিন্ন বিষয়ে আমাদের সম্পর্ক জোরদার করছি।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ পেয়েছি, এ ধরনের চুক্তিগুলো অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলে। বৈশ্বিক সমস্যা নিরসনে বৈশ্বিক সমাধান প্রয়োজন এবং সবার জন্য একটি ন্যায্য ব্যবস্থা তৈরি করতে বাংলাদেশ ও অন্যান্য অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করার জন্য আমরা প্রস্তুত।”
সাধারণত ভিসার মাধ্যমে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য যুক্তরাজ্যে থাকার অনুমতি পাওয়া যায়। সেটা কয়েক মাস পর্যন্তও হতে পারে। কিন্তু যারা আশ্রয় আবেদন করেন তারা দীর্ঘদিন বা অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে থাকার সুযোগ পান।
কারণ, মানবাধিকার আইন কিংবা আদালতের কারণে তাদের ডিপোর্ট করার ক্ষেত্রে বেগ পেতে হয় হোম অফিস বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে।
সবশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভিসা নিয়ে যুক্তরাজ্যে এসে আশ্রয় চাওয়া মানুষের মধ্যে সবার শীর্ষে রয়েছেন পাকিস্তানের নাগরিকেরা।
এক বছরে দেশটির ১৭,৪০০ নাগরিক ভিসা নিয়ে এসে আশ্রয় আবেদন করেছেন যুক্তরাজ্যে এরপরেই আছে বাংলাদেশের নাম। ৭,৪০০টি আবেদন নিয়ে তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছে ভারত।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post