দেশে চলমান ডলার সংকটের কারণে বিভিন্ন খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে। সেই বিপর্যয়ের মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ডলার সংকটের কারণে এক বছরেই বিমানের ক্ষতি হয়েছে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। তবে লোকসানের এই মাত্রা কমাতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে বিমান।
জানা গেছে, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির কারণে জাতীয় পতাকাবাহী বিমানটি বড় অঙ্কের লোকসান গুনতে হয়েছে। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিমানের নিট মুনাফা ছিল ১ হাজার ৩৯৪ কোটি টাকা। ডলার সংকটের কারণে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারজনিত কারণে আয় কমে মুনাফা দাঁড়ায় ২৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা। এই মুদ্রা বিনিময় হারের কারণে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি ৮৮ লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয় বিমানকে।
বিদেশে স্টেশনগুলোতে বিমানের নিজস্ব অফিস পরিচালনার খরচ বিমানকে ডলারে পরিশোধ করতে হয়। এ ছাড়া ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে অ্যারোনেটিক্যাল, নন-অ্যারোনেটিক্যাল চার্জও ডলার দিতে হয়। উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল, যন্ত্রাংশ আমদানি, ইনস্যুরেন্সসহ বিভিন্ন খাতে বিমানকে ডলারে খরচ করতে হয়।
বাংলাদেশি মুদ্রায় টিকিট বিক্রিতে আয় এবং ডলারে খরচ করতে গিয়ে বিমানকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। এই বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হারের কারণেই বিমান মুনাফার পরিবর্তে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বর্তমানে ২২টি আন্তর্জাতিক গন্তব্যে সপ্তাহে ১২৫টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। এর মধ্যে ভারতের কলকাতা ১৪টি, দিল্লিতে ৭টি, চেন্নাইয়ে ৩টি ফ্লাইট সপ্তাহে পরিচালিত হচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের সৌদি আরবের দাম্মামে ৫টি, রিয়াদে ৬টি, মদিনায় ৪টি, জেদ্দায় ৭টি, সংযুক্ত আরব আমিরাতের শারজাহতে ৫টি, দুবাইতে ৭টি, আবুধাবিতে ৭টি, কাতারের দোহায় ৪টি, ওমানের মাস্কাটে ৭টি, কুয়েতে ৩টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে ৪টি, ম্যানচেস্টারে ৩টি, কানাডার টরন্টোতে ৩টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে বিমান। নারিতায় সপ্তাহে ৩টি ফ্লাইট পরিচালিত হচ্ছে।
এ ছাড়া চীনের গোয়াঞ্জুতে ৩টি, থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ৭টি, মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ৭টি এবং সিঙ্গাপুরে ৭টি ফ্লাইট পরিচালিত হয়। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বহরে উড়োজাহাজ আছে ২১টি। এর মধ্যে বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ৪টি, বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার ২টি, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ ৬টি, ড্যাশ-৮ পাঁচটি।
সংকট মোকাবিলায় বিমানের নানা পদক্ষেপ
ইতোমধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রশাসনিক আদেশ জারিও করেছে বিমান। বৈদেশিক মুদ্রায় টিকিট বিক্রি বাড়াতে বিদেশের স্টেশনগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানের মার্কেটিং বিভাগকে এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। উড়োজাহাজের জ্বালানি তেল ব্যবহারে বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে সেন্ট্রাল কন্ট্রোলকে। একই সঙ্গে বিদেশের পরিবর্তে দেশ থেকে জ্বালানি সংগ্রহে সর্বোচ্চ চেষ্টা করতেও বলা হয়েছে।
যাত্রীদের অতিরিক্ত ব্যাগেজ বহন বাবদ চার্জ আদায় করে রাজস্ব আদায়ের জন্য সর্বোচ্চ পদক্ষেপ নিতে বিমানের বিভিন্ন স্টেশন-প্রধানদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বিমান-কর্মীদের বিদেশ প্রশিক্ষণ বন্ধ রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিমানের সব পরিচালককে সব ধরনের অপরিচালনামূলক ব্যয় হ্রাস করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। নন-শিডিউল ফ্লাইটের গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং বিল সংগ্রহের জন্য সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, বিগত অর্থবছরও বিমানের ভালো অঙ্কের মুনাফা হয়েছিল। কিন্তু ডলার এক্সচেঞ্জ রেটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিমান। বিশ্বব্যাপী ডলার সংকট আছে। এই সংকট মোকাবিলায় ডলারে ব্যয়ের ক্ষেত্রে সতর্কতার বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যতটা সম্ভব ব্যয় নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post