বরগুনার আমতলী উপজেলার চলাভাঙ্গা গ্রামে ভুয়া ভিসার অর্থ যোগাড় করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে চার পরিবার। ঋণ করা এসব অর্থ শোধ করতে না পেরে এখন পরিবারের সদস্যরা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। স্থানীয় ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমান ও তার পিতা শানু প্যাদার বিরুদ্ধে এসব অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করেন তারা।
ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সদর ইউনিয়নের চলাভাঙ্গা গ্রামের শানু প্যাদার ছেলে মিজানুর রহমান প্যাদা দীর্ঘদিন ধরে ওমান প্রবাসী। ওমানের কয়েকটি কোম্পানিতে সুইপার, গাড়ি চালকসহ বিভিন্ন পদে লোক নেওয়ার কথা জানান তিনি। এরপর ভুয়া ভিসায় আগ্রহীদের তিনি ওমানে পাঠান।
এদিকে মিজানের কথায় নিজেদের প্রয়োজনীয় সম্বল বিক্রি করে তার হাতে ১৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা তুলে দেন বিভিন্ন গ্রামের চারজন। তারা হলেন- চলাভাঙ্গা গ্রামের ইসমাইল হাওলাদারের ছেলে আউয়াল হাওলাদার, নাচনাপাড়া গ্রামের ছালাম আকনের ছেলে পলাশ আকন, চলাভাঙ্গা গ্রামের ওহাব গাজীর ছেলে রাহাত গাজী ও একই গ্রামের রুস্তুম গাজীর ছেলে শাহ জালাল গাজী।
পুরো অর্থ হাতে পেয়ে চারজনকে ভুয়া ভিসায় ওমান নিয়ে যায়ন মিজানুর রহমান। এরপর সবাইকে একটি নির্জন ঘরে বিভিন্ন মেয়াদে বন্দি করে রাখা হয়। এসময় তাদের মারধরের পাশাপাশি ঠিকমতো খাবারও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তাদের সঙ্গে থাকা সব টাকা-পয়সা মিজানুর নিয়ে যায়।
এক সময় তারা সবাই নিজেদের টাকায় দেশে ফেরেন। তখন তারা শানু প্যাদার কাছে জমা দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে তিনি তাদের মামলাসহ মারধরের ভয় দেখান। এরপর থেকে অনেক পরিবার ঋণ শোধের ভয়ে নিজ বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।
ভূক্তভোগী আউয়াল হাওলাদার জানান, ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমান প্যাদার বাবা শানু প্যাদা আমারে ৪০ হাজার টাহা বেতন দেওয়ার কথা কইয়া তিন লাখ টাহা নিয়া ভূয়া ভিসায় ওমান পঠায়। ওমানে যাওয়ার জন্য জায়গা-জমি, গরু-ছাগলসহ সবকিছু বিক্রি করে শানু প্যাদারে টাহা দিছি।
ওমানে নিয়া আমারে বন্দি কইর্যা ব্যামালা মাইর ধইর কইর্যা সাত মাস নির্জন ঘরে আটকাইয়া রাহে। ওই অবস্থায় খাইতে দেয় নাই। হেইয়ার পর মোরে মাইর্যা দেশে মোর স্ত্রীর নিকট থেকে ভয়ভীতি দেহাইয়া আরো ৩ লাখ ৩০ হাজার টাহা নেয়। কোন রহম হাতে পায়ে ধইর্যা পরানডা লইয়া দেশে আইছি। মুই এহন পথের ফহির অইয়া রাস্তায় রাস্তায় ঘুরি। মুই মোর টাহা ফেরত চাই।
অপর ভূক্তভোগী নাচনাপাড়া গ্রামের পলাশ আকন বলেন, ওমান প্রবাসী মিজানুর রহমানের বাবা শানু প্যাদা মোরে ৫০-৬০ হাজার টাহা বেতনের কথা কইয়া ড্রাইভিং ভিসায় পাঁচ লাখ টাহা নিয়া ভুয়া ভিসায় ওমান পাঠায়। ধারদেনা আর বাড়ির সব শেষ কইরা টাহা দিছি। ওমানে নিয়া কোন কাম কাইজ না দিয়া একটি ঘরে আটকাইয়া রাইখ্যা নির্যাতন কইরা পাঁচ মাস পরে মোরে দেশে পাঠাইয়া দেয়। সব শেষ কইরা মুই শানু প্যাদারে টাহা দিছি। এহন মুই দেনার ভয়ে বারতেও যাইতে পারি না পলাইয়া থাহি। মুই মোর টাহা ফেরত চাই।
অভিযুক্ত শানু প্যাদার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চারজনকে ওমানে নেওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, মূলত ওখানকার মালিকের কাজের অনুমতি না পাওয়ায় তারা দেশে চলে এসেছে। তবে তাদের ঘরবন্দি করে নির্যাতন করা হয়নি। ইতিমধ্যে একজনের টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। বাকিদের টাকাও ফেরত দেওয়া হবে।
আমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাখয়াত হোসেন তপু বলেন, এই বিষয়ে এখনো কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post