আপনি কি কখনও ভেবে দেখেছেন যে, ৩৬,০০০ ফুট উঁচুতে থাকা চলন্ত বিমানে কীভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়? বা বিমানে থাকা ওয়াই-ফাই কীভাবে আপনাকে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত রাখে?
বিমানে চলার সময় যাত্রীদেরকে মোবাইল ফোন বা ডিভাইসগুলি এয়ারপ্লেন মোডে রাখতে হয়, নয়ত একেবারে বন্ধ করে দিতে হয়। এটা অনেকের কাছেই বিরক্তিকর।
অনেকের জরুরি কাজে ভূমিতে থাকা অফিসের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে হয়। আবার লম্বা বিমান যাত্রায় ইন্টারনেটে অভ্যস্তদের কাছে ইন্টারনেট ছাড়া সময় কাটানো বিরক্তিকর লাগতে পারে। যদি উড়ন্ত বিমানে সব সময় ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়, তা নিঃসন্দেহে দারুণ বিষয়।
কিন্তু বিমানে কি ওয়াই-ফাই সুবিধা পাওয়া যায়?
সুখবর হচ্ছে, প্রতিদিন নতুন নতুন এয়ারলাইনস তাদের বিমানে ওয়াই-ফাই সুবিধা চালু করছে যার মাধ্যমে আকাশে থাকা অবস্থায়ও ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
কিন্তু মাটি থেকে ৩৬,০০০ ফুট উঁচুতে আকাশে কীভাবে ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে? আর ওয়াই-ফাই বলতে এখানে আসলে কী বোঝানো হচ্ছে? এই প্রশ্নের সহজ উত্তরে বলতে হয়: এতদিন আসলে আমরা বিমানে এই ওয়াই-ফাই এর সুবিধা পুরাপুরি কাজে লাগাতে পারিনি। ভবিষ্যতে বিমান ভ্রমণে আপনার কাজে লাগতে পারে এমন কিছু তথ্য জানা যাক।
*বিমানে কি ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়?
এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করছে কোন এয়ারলাইনসে যাচ্ছেন, যাত্রার রুট অর্থাৎ কোথা থেকে যাচ্ছেন এবং আপনাকে বহনকারী বিমানটি কোন মডেলের।
সবকিছু বিবেচনা করে বলা যায় হ্যাঁ, এখন অনেক এয়ারলাইনসের বিমানে ইন্টারনেট চালাতে পারবেন আপনি, ইন ফ্লাইট ওয়াই-ফাই এর সাহায্যে। যাত্রীদের চাহিদার কথা চিন্তা করে এখন অনেক এয়ারলাইনসই এই সুবিধা দিচ্ছে। ধীরে ধীরে ওয়াই-ফাই সেবা প্রদানকারী এয়ারলাইনসের সংখ্যা আরো বাড়ছে।
আপনাকে এজন্য এয়ারলাইনসে বুকিং করতে হবে। কিছু অপারেটর সিংগেল ইউজ পাস বা একবার ব্যবহারের জন্য ওয়াই-ফাই এর পাস দেয়। আবার কিছু কোম্পানির কাছ থেকে প্যাকেজও নিতে পারবেন।
তবে বেশি ব্যান্ডউইথের জন্য বেশি টাকা গুনতে হবে। তবে যদি বিমানে অবস্থানের সময়ে অফিস বা ব্যবসার কাজের মধ্যে থাকতে চান, এতটুকু খরচ করতেই পারেন। নতুবা আপনাকে বই পড়ে, ঘুমিয়ে, নয়ত জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে সময় কাটাতে হবে।
*বিমানে ওয়াই-ফাই কীভাবে কাজ করে?
বিমানে ওয়াই-ফাই চালানোর জন্য দুই ধরনের অপারেটিং সিস্টেম আছে। একটা হচ্ছে গ্রাউন্ড বেইজড, অর্থাৎ ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম বা Air-to-Ground (ATG) Wi-Fi, আর অন্যটি স্যাটেলাইট নিয়ন্ত্রিত সিস্টেম বা Satellite Wi-Fi।
মাটি থেকে আকাশে যে ওয়াই-ফাই কাজ করে তার ধরন অনেকটা মোবাইল ফোন সংযোগের মত।
এখানে বিমানের মূল কাঠামোর নিচে থাকা একটা অ্যান্টেনা মোবাইল টাওয়ারের সঙ্গে সার্বক্ষণিক সংযোগ রক্ষা করে চলে। বিমান যখন চলে, তখন এই অ্যান্টেনা একটার পর একটা নিকটবর্তী মোবাইল টাওয়ারের ট্রান্সমিটারের সাথে সংযুক্ত হতে থাকে।
মোবাইল ট্রান্সমিটারের সাথে সক্রিয় যোগাযোগ থাকার কারণে পুরো বিমানই ওয়াই-ফাই হটস্পট হয়ে ওঠে। তখন যাত্রীরা স্বাভাবিক ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করে তাদের সব কাজ করতে পারে—যেমন ইমেইল পাঠানো, ফোন কল করা এবং সিনেমা স্ট্রিম করা। তবে বিমান যখন বিশাল জলরাশির ওপর দিয়ে যায় তখন এই ব্যবস্থা কাজ করে না। যেমনটা হয় ট্রান্সআটলান্টিক পথে যাওয়ার সময়। তখন তখন বিমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভর করতে হয়।
পৃথিবীর কক্ষপথে ঘূর্ণায়মান অসংখ্য স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ আছে। এসব স্যাটেলাইটের সাহায্য নিয়েই স্যাটেলাইট ওয়াই-ফাই কাজ করে। এই ক্ষেত্রে বিমানের ওপরে থাকা নির্দিষ্ট অ্যান্টেনা দিয়ে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে বিমান। বিমান আকাশে ওড়ার সময় সবচেয়ে কাছে যে কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট খুঁজে পায়, সেটার সঙ্গে বিমানের ওপরে থাকার অ্যান্টেনার যোগাযোগ ঘটে।
স্যাটেলাইট ওয়াই-ফাই দুই ধরনের ব্যান্ডউইথ নিয়ে কাজ করে। ন্যারোব্যান্ড এবং ব্রডব্যান্ড। দুই ধরনের ব্যান্ডউইথেই যাত্রীরা পূর্ণ ইন্টারনেট সেবা পায়, তবে মুভি স্ট্রিম করার জন্য ন্যারোব্যান্ড কম উপযোগী।
https://www.youtube.com/watch?v=5byq-0EMpBU
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post