যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৫তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে অটোয়াস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন কানাডা। শনিবার (১৫-আগস্ট) স্থানীয় সময় সকাল ৯.১৫ বাংলাদেশ হাউজে দূতাবাসের সকল সদস্যদের নিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন হাইকমিশনার মিজানুর রহমান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন ও জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ, জাতির জনকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এক মিনিট নীরবতা পালন এবং ১৫ আগস্টের সকল শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা এবং দেশ ও জাতির কল্যাণ এবং সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশ থেকে যারা ওমান যেতে পারবেন
এসময় মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মাননীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন এবং আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দূতাবাসের প্রথম সচিব মিস অপর্না রানী পালের সঞ্চালনায় দিবসটি উপলক্ষে মহামান্য রাষ্ট্রপতি,মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্র মন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শোনান যথাক্রমে উপ-হাইকমিশনার চিরঞ্জীব সরকার, কাউন্সিলর সাখাওয়াৎ হোসেন, কাউন্সিলর দেওয়ান হোসেনে আইয়ুব, কাউন্সিলর শাকিল মাহমুদ।
আরও পড়ুনঃ প্রবাসীদের বিষয়ে সংসদে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী
বাণী পাঠের পর বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবনের উপর নির্মিত প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শন করা হয় এবং একটি উন্মুক্ত আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ আলোচনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রবাসী বাংলাদেশী সহ কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বক্তব্য প্রদান করেন। হাইকমিশনার তাঁর বক্তব্যের শুরুতে শোকাবহ আগস্টে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি বলেন, মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষা যেমন অবিচ্ছেদ্য সম্পর্কে আবদ্ধ, তেমনি বঙ্গবন্ধু, বাঙালি জাতি আর বাংলাদেশ একই সুতোয় গাঁথা। বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে অতি দ্রুত প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পাশাপাশি মিত্র বাহিনীর বাংলাদেশ ত্যাগ, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অতি দ্রুত স্বীকৃতি পাবার ক্ষেত্রে সফল হন। কিন্তু ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ও বিয়োগান্ত ঘটনায় জাতির এই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়।
আরো পড়ুনঃ ওমানে ভিক্ষা করলে এক বছরের জেল
হাইকমিশনার মিজানুর রহমান আরো বলেন, স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তির শুভ মুহূর্তে জাতির পিতা ও তাঁর পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের পলাতক হত্যাকারীদের বিচারের কাজ সম্পূর্ণ করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর জীবনের অন্যতম লক্ষ্য মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সাধন এবং বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের স্বপক্ষে লড়াই করার উদ্দেশ্যে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার কর্মসূচী এই স্বপ্নের ধারাবাহিক বাস্তবায়ন প্রয়াস। হাইকমিশনার বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুনঃ প্রবাসীদের জন্য আরো পাঁচ’শ কোটি টাকার ঋণ সহায়তার ঘোষণা
এ সময় দূতাবাসের নানা কর্মকান্ড তুলে ধরতে যেয়ে হাইকমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, করোনা সংকটকালেও আমাদের দূতাবাস প্রবাসীদের ডিজিটাল এবং ডাকের মাধ্যমে কনস্যুলার সেবা প্রদান করেছে। কানাডায় আটকে পড়া বাংলাদেশীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য বিশেষ ফ্লাইটের ব্যবস্থা করেছে। করোনা আক্রান্ত বাংলাদেশীদের জন্য “ডক্টরস পুল” গঠন করেছে যাতে তাঁরা যে কোন সময় করোনা বিষয়ে তাঁদের করণীয় সম্বন্ধে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের পরামর্শ পেতে পারে। ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য কানাডার বিভিন্ন প্রদেশে করোনা পূর্ববর্তীকালে বেশ কিছু সেমিনারের আয়োজন করেছে। মুজিব বর্ষে কানাডার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে যাতে বাংলাদেশে নেয়া যায় সে ব্যাপারে হাই কমিশনের পক্ষ থেকে আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। কানাডার কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছেন যে, এশিয়া অঞ্চলে তাঁর ভবিষ্যৎ যে কোন সফরে বাংলাদেশ তাঁর সফরসূচিতে বিবেচ্য হবে।
আরো পড়ুনঃ ইসরাইল-আমিরাত চুক্তিকে সমর্থন দিলো ওমান
এছাড়াও অত্র মিশনের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ ও কানাডার মধ্যে দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান হাইকমিশনার। তিনি বলেন, কানাডা ও বাংলাদেশের মধ্যে কৃষি, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগে ও মানব সম্পদ রপ্তানি ক্ষেত্রে পরিসর বাড়ানোর জন্য হাইকমিশন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আলোচনা অনুষ্ঠানে কমিউনিটি নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কবির চৌধুরী, শাহ বাহাউদ্দিন শিশির, মতিন মিয়া, মাসুদ সিদ্দিকী, মুন্সি বশির, মুক্তিযোদ্ধা গোলাম মুহিবুর রহমান এবং হাসানুজ্জামান প্রমুখ।
আরো পড়ুনঃ চারমাসে ওমান ছেড়েছে ২৩ হাজার বাংলাদেশি প্রবাসী
অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে উপস্থিত সকলকে নিয়ে “বঙ্গবন্ধু কর্নার” উদ্বোধন করেন হাইকমিশনার মিজানুর রহমান। হাইকমিশনার উল্লেখ করেন যে, বঙ্গবন্ধু কর্নারে বঙ্গবন্ধুর উপর পুস্তক, ডকুমেন্টারিসহ বিভিন্ন উপকরণ থাকবে যা সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। বিশেষ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারবে। রাষ্ট্রদূতের এমন কাজের ভুয়ুসি প্রশংসা করেন উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশীগণসহ আমন্ত্রিত অতিথিগণ। অনুষ্ঠানের শেষে ১৫ই আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকলের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে এবং দেশের করোনা থেকে মুক্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করা হয়।
আরও দেখুনঃ প্রবাস টাইম নিয়ে যা বললেন ওমানের রাষ্ট্রদূত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post