কেয়ার ও ওয়ার্ক পারমিট ভিসার নামে তুঘলকি কাণ্ড চলছে যুক্তরাজ্যজুড়ে। বাংলাদেশি কমিউনিটির কিছু পরিচিত মুখ কেয়ার ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের নামে বাংলাদেশ থেকে শত শত মানুষকে আনলেও কাজ না পেয়ে যুক্তরাজ্যে তারা মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
সংঘবদ্ধ প্রতারণার জাল মসজিদ-মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। লন্ডনের বাংলাদেশি অধ্যুষিত ক্যামডেনের ক্যানজিস্টাউনের বাংলাদেশিদের বড় একটি মসজিদের নামে ওয়ার্ক পারমিটের কথা বলে অন্তত ১৭ জনের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক দুদিন আগে পদত্যাগ করেছেন। এসব ঘটনায় সামাজিক বিচার-সালিশ চলছে কমিউনিটিতে। পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ না পাওয়ায় সদ্য কেয়ার ও ওয়ার্ক পারমিটে আসা ভুক্তভোগীরা ভুগছেন অন্তহীন দুর্দশায়। অনেকের থাকার জায়গা নেই। কাজ না পেয়ে ভুক্তভোগীদের অনেকের ঠিকমতো খাবার না জুটলেও কেয়ার ভিসা ও ওয়ার্ক পারমিটের দালালি করে ব্রিটেনজুড়ে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে রাতারাতি সৃষ্টি হয়েছে একটি নব্য ধনিক শ্রেণি। ভিসার দালালি করে অর্জিত অর্থ ব্রিটেনের বাইরে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করছেন এসব ফড়িয়ারা।
টাকা ফেরত পাওয়ার আশায় ভুক্তভোগীরা নাম প্রকাশ করে বক্তব্য দিতে চাইছেন না এখনই। নাম না প্রকাশের শর্তে ক্যামডেনের ক্যানজিস্টাউনের ওই মসজিদটির ভিসা কেলেঙ্কারির ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত একজন জানান, মসজিদটির মাদ্রাসা শাখার একজন শিক্ষকও গত কয়েক মাস ধরে কোথায় কেউ জানে না। ভুক্তভোগীরা বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন ও মসজিদগুলোতে পরিচালিত মক্তবের শিক্ষক আনার জন্য টিয়ার-টু’র আওতায় মিনিস্টার অফ রিলিজিয়ন ভিসা নিয়েও কমিউনিটিতে চলছে সংঘবদ্ধ প্রতারণা।
মসজিদের ইমাম-মক্তবের শিক্ষক ভিসায় বাংলাদেশ থেকে আনার পর নানামুখী প্রতারণার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে ব্রিটেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রবীণ শিক্ষক ও লেখক ফরিদ আহমেদ রেজা বলেন, মসজিদ-মক্তব যারা পরিচালনা করেন তাদের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির বিধি-বিধান নিয়েও অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।
ইউকে-বাংলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল ইসলাম বলেন, গত দুই বছর ধরে আমরা সংবাদপত্র ও সামাজিক মাধ্যমে কেয়ার ওয়ার্ক পারমিট ভিসার নামে বাংলাদেশি কমিউনিটিতে যে সংঘবদ্ধ প্রতারণা চলছে তা নিয়ে লিখছি, কথা বলছি, মানুষকে সচেতন করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। কিন্তু কমিউনিটির কিছু আইনজীবীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা এই ভিসা ব্যবসায় নেমে রাতারাতি শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ভিসার ব্যবসা করে সমাজে নতুন কালো টাকার মালিক ধনিক শ্রেণি সৃষ্টি হয়েছে। এই টাকাটা বাংলাদেশে জমি বিক্রি, বাবার পেনশন বা এফডিআর ভেঙ্গে আনা হয়েছে। সাইদুল আরও বলেন, কেয়ার ভিসার জন্য মাত্র ২০০ পাউন্ড লাগলেও এক-একটি ভিসা দালালদের কারণে বিক্রি হচ্ছে ন্যূনতম ১৫ থেকে ২২ হাজার পাউন্ড যা বাংলাদেশি টাকায় পঁচিশ লাখের বেশি। ২৫ লাখ টাকা খরচ করে এদেশে এসে এখন হাজারো বাংলাদেশি বেকার। কমিউনিটিতে অসংখ্য সংঘঠন থাকলেও এমন ভাগ্যহত বাংলাদেশিদের পাশে দাঁড়াতে এখন পর্যন্ত কোনও সংগঠনের দৃশ্যমান উদ্যোগ নেই। বিশেষ করে মসজিদের নামে ১৭ জনকে ভিসা দেওয়া নিয়ে ঘটা প্রতারণার ঘটনায় আমরা হতভম্ব হয়ে গেছি।
লন্ডনের বাংলাদেশি কমিউনিটির দুই ব্যারিস্টার ইকবাল হোসেন ও শুভাগত দে গণমাধ্যমকে বলেন, যে কোনও ভিসায় আসার আগে জেনে-বুঝে আসাটাই সবচেয়ে জরুরি। প্রতিদিন অনেকে আসছেন নিজেদের দুর্দশার কথা আমাদের বলছেন। নিয়োগদাতার সাথে সরাসরি যোগাযোগ করে সংশ্লিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জন করে আসলে ভোগান্তি কমবে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post