বিশ্বের একটি শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে ওমানের বেশ সুনাম রয়েছে। দেশটির আইন কানুন এবং রাস্তাঘাটের উন্নয়ন দেখে যে কেউই মুগ্ধ না হয়ে পারবেনা। তবে এমন একটি শান্তিপ্রিয় দেশে কেনো হঠাত অশান্তির দাবানল জ্বলে উঠলো এমন প্রশ্ন অনেকেরই। মহামারী করোনা প্রাদুর্ভাবে দেশটির বিভিন্ন কোম্পানি শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত করছে এমন বেশকিছু অভিযোগ আসে গত ২মাস যাবত দেশটির শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন শ্রমিক ইউনিয়নের কাছে। এভাবেই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন শ্রমিকরা। মুল ঘটনার সূত্রপাত শ্রমিকদের অধিকার নিয়েই।
৩১মে ওমানের আল তাসনিম কোম্পানি (যে কোম্পানিকে ওমানে সবাই আল তুর্কি নামেই চেনে) থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বাংলাদেশী শ্রমিক প্রবাস টাইমের কাছে উক্ত কোম্পানির নানা অনিয়মের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেন। তিনি বলেন, “আমি নিজুয়া দাখেলিয়াহ অঞ্চলে আল তুর্কি কোম্পানিতে কাজ করি। এই কোম্পানিতে আমার মতো আরও কিছু বাংলাদেশী আছে। আমাদের ক্যাম্পে ২জন করোনা রোগী শনাক্ত হলেও তেমন কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি কোম্পানি। প্রতিষ্ঠানের পক্ষথেকে নিয়মিত ডিউটি করালেও শ্রমিকদের নিরাপত্তার দিকে কোনো ভ্রূক্ষেপই দেয়নি কোম্পানি। ২০০০ শ্রমিক কাজ করে একটি ক্যাম্পে থেকে। কিন্তু তাদের স্বাস্থ্যবিধির কোনোই পরওয়া করেনি আল তুর্কি কোম্পানি। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই কাজ করেছেন শ্রমিকরা।
উক্ত বাংলাদেশী শ্রমিকের পাঠানো কিছু স্থির চিত্রে দেখা যাচ্ছে, ক্যাম্পের মাঝে গাদাগাদি করে রাত্রি যাপন করেন শ্রমিকরা। এ ছাড়াও ডাইনিং হলে প্রচুর ভিড়ের মাঝেই কোনো ধরনের সামাজিক দুরত্ব না মেনে খাবার পরিবেশন সহ নানা অব্যবস্থাপনায় নিজেদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে চরম ক্ষোভ দেখা দেয় শ্রমিকদের মাঝে। এরপর গত ৫জুলাই উক্ত কোম্পানির নেজুয়া রয়্যাল ওমান পুলিশ একাডেমী দাখেলিয়াহ ক্যাম্পের একজন ভারতীয় শ্রমিককে মদ বিক্রি করছে এমন সন্দেহে ক্যাম্প বস কোম্পানির লোকজন মিলে উক্ত ভারতীয় নাগরিককে বেধরম মারপিট করে। এতে উক্ত ব্যক্তি গুরুতর আহত হলেও তাকে হাসপাতালে পর্যন্ত নেয়নি চিকিৎসা দিতে। এমতাবস্থায় ক্যাম্পের অন্য শ্রমিকরা এসে ক্যাম্প বসের কাছে এসে তাকে হাসপাতালে নিতে অনুরোধ জানালে তাকে হাসপাতালে না নিয়ে আরও উল্টো শ্রমিকদের গালি গালাজ করে কোম্পানির লোকজন। উক্ত ঘটনার পর থেকে প্রথমে আল তুর্কি কোম্পানির নেজুয়া আরওপি একাডেমী ক্যাম্পের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ ঘোষণা করেন।
আরও পড়ুনঃ ওমানে জাতীয় জরিপের পর মসজিদ ও সেলুন খোলার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
এর দুইদিন পর নেজুয়া ইঝকিতে অবস্থিত আল তুর্কি কোম্পানির আরেকটি ক্যাম্পের শ্রমিকরা কাজ বন্ধ ঘোষণা করে। এভাবেই একেক করে ওমানের সকল ক্যাম্পেই কাজ বন্ধ ঘোষণা করেন আল তুর্কি কোম্পানির শ্রমিকরা। কোম্পানির শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো এবং খাবারের মান ভালো করা সহ বেশকিছু ন্যায্য দাবী করে আসছিলো দীর্ঘদিন যাবত শ্রমিকরা। সর্বশেষ এক শ্রমিককে মেরে আহত করার পর তা তীব্র আন্দোলনে রূপ নেয়। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে কোম্পানি এমন অভিযোগ শ্রমিকদের। একেকজন শ্রমিক দিয়ে ২ জন শ্রমিকের কাজ করালেও বেতন ঠিক মতো পরিশোধ করেনা এমন অভিযোগ তাদের।
উক্ত কোম্পানির শ্রমিক আমাদের জানান, “২০১৫ সালে আমরা এখানে যখন প্রথম আসি, তখন আমাদের বেতন ১৩০ রিয়াল ছিলো, এবং কাজ ও কম করা লাগতো। কিন্তু এখন বেতন কমিয়ে ১০০ থেকে ১০৫ রিয়াল করেছে এবং কাজের চাপ আগের থেকে দিগুণ।” তিনি আরও বলেন, “গত ৮তারিখ স্থানীয় সময় সকাল ১১টায় আমাদের মালিক মজিত খিমজি আমাদের ক্যাম্পে এসে বলেছিলেন যে, এখন থেকে ২জনের কাজ একজন শ্রমিক করলে কোম্পানি অনেক এগিয়ে যাবে। কিন্তু এ সময় শ্রমিকরা বেতনের কথা জানতে চাইলে তিনি চুপ হয়ে যান। তখন শ্রমিকরা আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যান। শ্রমিকদের দাবী, আমাদের দিয়ে দিগুণ কাজ করালে বেতন কেনো দিগুণ দেওয়া হবেনা?”
আরও পড়ুনঃ ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীরা পাবেন ২০০ কোটি টাকার ঋণ
তিনি আরও বলেন, “গতকাল (১২জুলাই) ক্যাম্পের বস এবং মালিক পক্ষের লোকজন কিছু স্থানীয় ওমানি ক্যাডার ভাড়া করে এনে কিছু শ্রমিককে মারধর করে, এ সময় ৩ জন শ্রমিক আহত হলে পরিস্থিতি অস্বাভাবিক রূপ ধারণ করে।” তিনি বলেন, “এই ক্যাম্পে আমরা ২৫/৩০ জনের মতো বাংলাদেশী আছি। তবে আমাদের এই কোম্পানিতে ৬০০/৭০০ বাংলাদেশী শ্রমিক রয়েছে। আমরা সবাই এখন চরম আতঙ্কে আছি। মাঝে মধ্যেই ক্যাম্পের লোকজন স্থানীয় ওমানিদের এনে শ্রমিকদের উপর আক্রমণ করে। এমতাবস্থায় আমরা গত ৩দিন যাবত রাত জেগে পাহারা দিচ্ছি। গতকাল কিছু বহিরাগত ওমানি ক্যাম্পে প্রবেশ করে শ্রমিকদের ধাওয়া করে, পরে সকল শ্রমিক এক হয়ে তাদের ধাওয়া করলে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এখন ক্যাম্পের চারিদিকে সেনাবাহিনী মোতায়েন রয়েছে। গোটা এলাকা পুরো থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী ছাড়াও স্পেশাল বাহিনীও মোতায়েন রয়েছে ক্যাম্পের চারিদিকে। আজ কোম্পানির মালিক মজিত খিমজি’র আসার কথা রয়েছে উক্ত ক্যাম্পে এমনটি শুনা যাচ্ছে। তবে মালিকের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের কঠিন অভিযোগ রয়েছে। তারা বলেন, আমাদেরকে জিম্মি করে কাজ করানো হয়। কিছু বললেই দেশে পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয় কোম্পানি।”
https://www.facebook.com/100010791211053/videos/pcb.1175703132799383/1175694079466955/?type=2&theater
আরও দেখুনঃ প্রবাস টাইম নিয়ে যা বললেন ওমানের রাষ্ট্রদূত
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post