জাপানের রাজধানী টোকিওর ‘ডন ক্যাফে’ দেখতে সাধারণ রেস্তোরাঁর মতোই৷ কিন্তু কফি প্রস্তুতকারক ও পরিচারকদের পাশাপাশি সেখানে রোবটও কাজ করে৷ কয়েকটি রোবট চেয়ারে বসে অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করে৷ কয়েকটি আবার অর্ডার করা খাবার পরিবেশন করতে ব্যস্ত৷
রেস্তোরাঁর অতিথিরা রোবটগুলির সঙ্গে ভাবের আদানপ্রদান করতে চান৷ মানুষের মতো দেখতে অ্যান্ড্রয়েড যন্ত্রমানবগুলির একটা বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ সেগুলির মধ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো কোনো প্রযুক্তি নেই৷ এই রোবট আসলে এমন মানুষের অবতার, যারা দূর থেকে সেগুলি নিয়ন্ত্রণ করেন৷ রোবটের চোখে বসানো ক্যামেরা, স্পিকার ও মাইক্রোফোনের কল্যাণে তথাকথিত পাইলটরা অতিথিদের সঙ্গে গল্পগুজব করতে পারেন৷ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এই পাইলটরা শুধু বাসা অথবা হাসপাতালের ঘর থেকে কাজ করতে পারেন৷
মায়া তাদেরই একজন৷ এক ক্রনিক রোগের কারণে তাকে এখন হুইলচেয়ারের উপর নির্ভর করতে হয়৷ ২৪ বছর বয়সি সেই নারীর কাছে কোনো চাকরি না পাওয়া অত্যন্ত কষ্টের অভিজ্ঞতা ছিল৷ ‘ডন ক্যাফে’-তে কাজ পেয়ে তাঁর জীবনটা বদলে গেল৷ নিজের অতীত তুলে ধরে মায়া বলেন, ‘‘আমি অনেক চাকুরির আবেদন করেছি৷ কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষা শেষ করার পর কোনো সুযোগ পাই নি৷ তখন খুব দুঃখ ও অবসাদ হয়েছিল৷ ভেবেছিলাম, কোনোদিন কাজ করতে পারবো না৷ তখনই পাইলটের এই চাকুরির খবর পেলাম৷ সেটা সত্যি অসাধারণ৷ আমার কাছে সেটা ছিল শেষ আশার আলো৷ অতিথিদের মনোরঞ্জন হলে, পরের বারও দেখা হবে কিনা, এমন প্রশ্ন শুনলে আজ আমি কৃতজ্ঞ বোধ করি৷ আমি মানুষকে কোনোভাবে সাহায্য করছি, সেটা জানতে পেরে আমার খুব আনন্দ হয়৷”
ইয়োশিফুজি এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা৷ তিনি অরি ল্যাবোরেটরি নামের কোম্পানির সহ প্রতিষ্ঠাতা ও কর্ণধার৷ এই কোম্পানি ক্যাফের ওরিহিমে রোবট তৈরি করে৷ ছোটবেলা থেকেই ইয়োশিফুজি একাকিত্বের সমস্যায় ভুগতেন৷ স্বাস্থ্যের সমস্যার কারণে অনেক বছর তিনি ক্লাসে যেতে পারেন নি৷ কেন্তারো বলেন, ‘‘সাড়ে তিন বছর আমি স্কুলে যেতে পারি নি৷ সব সময়ে মনো হতো, অন্য একটা শরীর পেলে কী ভালোই না হতো! কারণ চোট পেলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অন্য একটি শরীরের কল্যাণে সামাজিক জীবনে অংশ নিতে পারতান৷”
রোবট কি মানুষের চাকুরি খেয়ে ফেলছে? কেন্তারো ইয়োশিফুজি নতুন প্রযুক্তির সামাজিক সম্ভাবনা কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট কাজে লাগিয়ে আমাদের কাজ আরো দক্ষভাবে করা বা কর্মীর সংখ্যা কমাতে চাই না৷ বরং শয্যাশায়ী হয়ে পড়লে বা শরীর নড়াচড়া না করতে পারলেও যাতে আমরা কাজের জায়গা পেতে পারি, সেটাই হলো লক্ষ্য৷”
রেই এই প্রথম বার ডন ক্যাফেতে এসেছেন৷ সেখানকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি নিশ্চিত ছিলেন না৷ কোনো প্রত্যাশাও ছিল না৷ কিন্তু তাঁর দ্রুত রোবটের সঙ্গে কথা বলার অভ্যাস হয়ে গেছে৷ রেই বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, এটা দারুণ প্রকল্প৷ আশা করি, ভবিষ্যতে আরো সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এটিকে একটা সূচনার জায়গা হিসেবে আমরা কাজে লাগাতে পারি৷ মানুষ ও রোবটের মধ্যে যে সংযোগ তৈরি হয়েছে, তা সত্যি হৃদয় ভরিয়ে দেয়৷”
শারীরিক প্রতিবন্ধী বা ক্রনিক রোগীদের প্রায়ই সামাজিক মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয়৷ সমালোচকদের মতে, সরাসরি অথবা অবতারের মাধ্যমে তাদের আরো বেশি অংশগ্রহণ স্পষ্ট লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে ঘোষণা করা উচিত৷ সেটা সম্ভব হয়ে ওঠা পর্যন্ত ডন ক্যাফের রোবটগুলি একাকিত্ব কমিয়ে যাচ্ছে৷ পাইলট ও গ্রাহক – দুই পক্ষই এর সুফল পাচ্ছেন৷
সূত্র: ডয়চে ভেলে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post