গত বছর রেকর্ডসংখ্যক আমেরিকান টাকার বিনিময়ে দ্বিতীয় কোনো দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছিলেন। টাকার বিনিময়ে মেলে নাগরিকত্ব? ভেবে অবাক হচ্ছেন? তবে মনে রাখুন, টাকায় কি না মেলে! টাকা থাকলে নাগরিকত্ব কেনা যায় অনেক দেশেই। নিচে আলোচিত এমন ১১টি দেশে বিনিয়োগ করলেই পেয়ে যাবেন সোনালি পাসপোর্ট! চলুন জেনে নেওয়া যাক সেসব দেশের নাম ও গোল্ডেন পাসপোর্ট পাওয়ার উপায়।
১. অস্ট্রিয়া: ৯৫ লাখ ডলার বিনিয়োগে নাগরিকত্ব
আপনি কয়েক মিলিয়ন ডলারের মালিক হলেই অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব কিনতে পারবেন। অস্ট্রিয়ার নাগরিকত্ব আইনের ১০ ধারা ৬-এর অধীনে দেশটির সরকার ‘অসাধারণ যোগ্যতা’ দেখিয়ে বিদেশিদের নাগরিকত্ব দিতে পারে। এসব অসাধারণ যোগ্যতার মধ্য রয়েছে—বৈজ্ঞানিক, সাংস্কৃতিক বা অর্থনৈতিকভাবে অস্ট্রিয়ায় ভূমিকা রাখা।
অস্ট্রিয়ান আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, আবেদনকারীদের অবশ্যই অস্ট্রিয়ার অর্থনীতিতে সরাসরি বিনিয়োগ করতে হবে। এর মধ্যে ব্যবসা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি বা নতুন প্রযুক্তির প্রবর্তন হতে পারে।
নাগরিকত্বের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের নির্দিষ্ট পরিমাণ স্পষ্ট নয়। তবে ফোর্বস ম্যাগাজিনের প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়, এই অঙ্ক প্রায় ৯৫ লাখ ডলার।
২. অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডা: ন্যূনতম ১ লাখ ডলার
সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, বিনিয়োগের মাধ্যমে অ্যান্টিগুয়া অ্যান্ড বারবুডার নাগরিকত্ব পাওয়ার চারটি উপায় রয়েছে। সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল বিকল্প হলো—দেশটির জাতীয় উন্নয়ন তহবিলে এক লাখ ডলার অনুদান। বিকল্পভাবে আবেদনকারীরা ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেড় লাখ ডলার দান করতে পারেন।
আবেদনকারীরা কমপক্ষে চার লাখ ডলার সমপরিমাণ অর্থ আবাসন খাতে (রিয়েল এস্টেট) বিনিয়োগ করতে পারেন। এর প্রসেসিং ফি রয়েছে আরও ৩০ হাজার ডলার।
দেশটির নাগরিকত্ব পাওয়ার সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প হলো—৩০ হাজার ডলার ফিসহ দ্বীপের একটি অনুমোদিত ব্যবসায় কমপক্ষে ১৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা।
৩. ডমিনিকা: ন্যূনতম ১ লাখ ডলার
কমনওয়েলথ অব ডোমিনিকা সরকারের মতে, বিনিয়োগের মাধ্যমে ক্যারিবীয় দ্বীপ ডোমিনিকার নাগরিকত্ব পাওয়ার দুটি উপায় রয়েছে। প্রথমটি হলো—দ্বীপের অর্থনৈতিক উন্নয়ন তহবিলে এক লাখ ডলার দান করা এবং দ্বিতীয়টি হলো—অনুমোদিত উন্নয়নে দুই লাখ ডলার মূল্যমানের আবাসন কেনা।
৪. গ্রেনাডা: ন্যূনতম দেড় লাখ ডলার
গ্রেনাডা ওয়েস্ট ইন্ডিজের একটি দ্বীপরাষ্ট্র। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্বের জন্য দুটি উপায় রয়েছে, যথা—ন্যাশনাল ট্রান্সফরমেশন ফান্ডে দেড় লাখ ডলার দান করা, যা পর্যটন, কৃষি এবং বিকল্প জ্বালানিসহ বিভিন্ন শিল্প প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এ ছাড়া কমপক্ষে ২ লাখ ২০ হাজার ডলার মূল্যমানের একটি সম্পত্তি কেনা। তবে সেই কেনা সম্পত্তি চার বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না।
৫. সেন্ট কিটস এবং নেভিস: দেড় লাখ ডলার
দেশটির সরকারি সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, বিনিয়োগের মাধ্যমে সেন্ট কিটস এবং নেভিসের নাগরিকত্বের পাওয়ার তিনটি উপায় রয়েছে। প্রথমটি হলো টেকসই উন্নয়ন তহবিলে দেড় লাখ ডলার দান করা। ২০১৮ সালে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, বিকল্প শক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের প্রচারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য এ প্রকল্প চালু করা হয়।
দ্বিতীয়ত, আবেদনকারী ১ লাখ ৭৫ হাজার ডলার অবদান রাখতে পারেন। তৃতীয় এবং চূড়ান্ত বিকল্প হলো— কমপক্ষে ২ লাখ ডলার মূল্যমানের একটি অনুমোদিত রিয়েল এস্টেট প্রকল্পে বিনিয়োগ করা।
৬. সেন্ট লুসিয়া: ১ লাখ ডলার
সেন্ট লুসিয়া পূর্ব ক্যারিবিয়ান সাগরে অবস্থিত একটি আগ্নেয় দ্বীপ। দেশটির বিনিয়োগ অভিবাসন কাউন্সিল অনুসারে, চারটি ভিন্ন বিনিয়োগ প্রকল্পের বিনিময়ে দেশটি নাগরিকত্ব দিয়ে থাকে।
সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল উপায় হলো—দ্বীপের জাতীয় অর্থনৈতিক তহবিলে এক লাখ ডলার অনুদান। রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগে আগ্রহীরা কমপক্ষে তিন লাখ ডলার মূল্যমানে সম্পত্তি কিনতে পারেন, যা পাঁচ বছরের আগে বিক্রি করা যাবে না।
উপরন্তু, একটি ‘অনুমোদিত এন্টারপ্রাইজ প্রকল্পে’ ন্যূনতম ৩৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করতে হবে, যা রেস্তোরাঁ এবং ক্রুজ পোর্ট থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরিবহন পরিকাঠামোও হতে পারে। প্রকল্পগুলো স্থানীয় অর্থনীতিতে কমপক্ষে তিনটি স্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করতে হবে।
চূড়ান্ত বিকল্প হলো—সরকারি বন্ডে ন্যূনতম ৫ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা। বর্তমানে এ প্রকল্পে কোভিড-১৯ ত্রাণ কর্মসূচির অধীনে ৫০ শতাংশ ছাড় চলছে।
৭. জর্ডান: ন্যূনতম ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার
জর্ডান ইসরায়েলের সীমান্তবর্তী একটি শুষ্ক অঞ্চলের দেশ। হেনলি অ্যান্ড পার্টনারস অনুসারে, তিনটি বিনিয়োগ পদ্ধতি দেশটির নাগরিকত্ব মেলাতে পারে।
সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিকল্প হলো—কোনো প্রকল্পে ৭ লাখ ৫০ হাজার ডলার বিনিয়োগ করা যা দেশটির রাজধানী আম্মানের বাইরে অবস্থিত একটি কমিউনিটিতে কমপক্ষে ১০টি স্থানীয় কর্মসংস্থান তৈরি করে। আর মূলধন প্রকল্পগুলোতে ন্যূনতম ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ প্রয়োজন।
অন্যান্য বিনিয়োগের মধ্যে রয়েছে—ন্যূনতম তিন বছরের জন্য সেন্ট্রাল ব্যাংক অব জর্ডানে (সিবিজে) ১০ ডলার ডিপোজিট করা, অথবা ১০ লাখ ডলার মূল্যমানের ট্রেজারি বন্ড কেনা এবং ছয় বছরের জন্য রাখা।
অভিবাসী বিনিয়োগকারীদের জন্য চূড়ান্ত বিকল্প হলো—জর্ডানভিত্তিক একটি কোম্পানির শেয়ার কেনা যার মূল্য কমপক্ষে ১৫ লাখ ডলার।
৮. মাল্টা: ৭ লাখ ৩৮ হাজার ইউরো থেকে ৮ লাখ ৮৮ হাজার ইউরো
মাল্টা ইতালির উপকূলে অবস্থিত একটি দ্বীপরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য। জটিল হলেও এই দেশেও বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের মতে, আন্তর্জাতিক আর্থিক কেলেঙ্কারিতে নাম উঠে আসার কারণে এই দেশে এখন বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। কারণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন সদস্য দেশগুলোতে সোনালি পাসপোর্টের ওপর নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে।
পরামর্শক সংস্থা পিডব্লিউসি অনুসারে, বিনিয়োগের চারটি শর্ত পূরণের মাধ্যমে মাল্টার নাগরিকত্ব অর্জনের পথ এখনো খোলা রয়েছে:
ক. কমপক্ষে ৭ লাখ ইউরো মূল্যমানের রিয়েল এস্টেট কেনা।
খ. অর্থনীতি ৬ লাখ ইউরো থেকে এবং সাড়ে ৭ লাখ ইউরোর মধ্যে একটি অতিরিক্ত অবদান।
গ. একটি অনুমোদিত বেসরকারি সংস্থায় ১০ হাজার ইউরো অনুদান।
ঘ. একটি বৈধ আবাসিক কার্ডধারী হওয়া যা মাল্টায় ১২ থেকে ৩৬ মাস বসবাস করার পর বছরে সর্বনিম্ন ১৬ হাজার ইউরো মূল্যমানের লিজের অধীনে দেওয়া হয়।
৯. মন্টিনিগ্রো: ন্যূনতম আড়াই লাখ ইউরো বিনিয়োগ ও ২ লাখ ইউরো অনুদান
মন্টিনিগ্রোর সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, দেশটিতে বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের দুটি উপায় রয়েছে। আবেদনকারীরা হয় সাড়ে ৪ লাখ ইউরো দেশের রাজধানী পোদগোরসিয়ার মধ্যে প্রকল্পে অথবা রাজধানীর বাইরের এলাকায় আড়াই লাখ ইউরো বিনিয়োগ করতে পারেন। একইসঙ্গে মন্টিনিগ্রোর উন্নয়ন এবং উদ্ভাবন তহবিলে ২ লাখ ইউরো দান করতে পারেন।
১০. উত্তর মেসিডোনিয়া: সর্বনিম্ন ২ লাখ ইউরো
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের মতে, উত্তর মেসিডোনিয়ায় নাগরিকত্বর জন্য দুটি বিকল্প রয়েছে: ১. একটি ব্যক্তিগত বিনিয়োগ তহবিলে ২ লাখ ইউরো বিনিয়োগ। ২. রেস্তোরাঁ বা শপিং সেন্টার নির্মাণে ৪ লাখ ইউরো বিনিয়োগের মাধ্যমে কমপক্ষে ১০টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
১১. তুরস্ক: সর্বনিম্ন ৪ লাখ ডলার
বিনিয়োগের মাধ্যমে নাগরিকত্ব লাভের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো তুরস্ক। দেশটির সরকারি ওয়েবসাইট অনুসারে, আবেদনের সাতটি ভিন্ন বিনিয়োগের উপায় রয়েছে। এর মধ্য সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল হলো চার লাখ ডলার মূল্যমানের রিয়েল এস্টেট সম্পদ কেনা।
এ ছাড়া লাটভিয়া ন্যূনতম ৬০ হাজার ইউরো, পানামা ন্যূনতম ৪০ হাজার ডলার বিনিয়োগ এবং থাইল্যান্ডে ন্যূনতম ১৯ হাজার ডলার ফি দিয়েও নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যায়।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post