ডিজিটাল হুন্ডি-জুয়ার দায় নিয়ে ঠেলাঠেলি, গঠন করা হচ্ছে টাস্কফোর্স । হুন্ডির মাধ্যমে এক বছরে পাচার হয়েছে ৭৮০ কোটি ডলার বা ৭৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশে ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম বর্তমানে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আর এই জনপ্রিয়তার সুযোগ নিয়ে দিনে দিনে অর্থ পাচারের বড় মাধ্যম হয়ে উঠছে এই ডিজিটাল পেমেন্ট সিস্টেম। অনলাইনে হুন্ডি ও জুয়ার বড় ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সর্বশেষ এমটিএফইর মাধ্যমে যে অর্থ পাচারের ঘটনা ঘটেছে, তার দায় এখন কেউ নিতে চায় না। আইসিটি বিভাগ বলছে, আর্থিক লেনদেন হলে সেটা দেখভালের দায়িত্ব বাংলাদেশ ব্যাংকের। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অনলাইনে অবৈধ কিছু হলে সেটা দেখভালের দায়িত্ব আইসিটি বিভাগের। অথচ এই ঠেলাঠেলির মধ্যেই দেশ থেকে ১০ থেকে ১৫ হাজার কোটি টাকা বাইরে চলে গেছে। নিঃস্ব হয়ে পথে বসেছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। অথচ সবার চোখের সামনেই ঘটে গেছে এই অপরাধ।
উদ্ভূত এই পরিস্থিতিতে করণীয় ঠিক করতে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে মঙ্গলবার এক বৈঠক হয়েছে। সেখানে কেউ দায় নিতে রাজি হননি। তবে সবার সমন্বয়ে একটা টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। সেখানে সবাই সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার ইত্তেফাককে বলেন, কারো একার পক্ষে এটা ঠেকানো সম্ভব নয়। ফলে টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হচ্ছে। সেখানে অর্থ বিভাগ, গোয়েন্দা পুলিশ, সিআইডি, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), বিটিআরসিসহ সবাই থাকবে। প্রতি মাসে টাস্কফোর্সের মিটিং করে করণীয় ঠিক করা হবে। এ ধরনের ঘটনা যাতে আর না ঘটে, সেই ব্যবস্থা হিসেবেই এই টাস্কফোর্স।
অবৈধ অ্যাপের মাধ্যমে যে লেনদেন হচ্ছে, সেটা হুন্ডির মাধ্যমে। আবার অবৈধ হুন্ডির সঙ্গে আরও যোগ হয়েছে অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স ও ক্রিপ্টো ট্রেডিং। ফলে একদিকে মুদ্রা পাচার বাড়ছে, অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। এসব অবৈধ কার্যকলাপ রোধে একসঙ্গে কাজ করছে সরকারের সবগুলো সংস্থা। বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার লেনদেনে নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। সন্দেহজনক লেনদেন হওয়া অ্যাকাউন্ট ফ্রিজসহ (জব্দ) ডিজিটাল হুন্ডি কারবারিদের গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সিআইডির একজন কর্মকর্তা ইত্তেফাককে বলেন, ‘আমরা তদন্ত করে প্রায় ১ লাখ মোবাইল নম্বর শনাক্ত করেছি, যে নম্বরগুলোতে এমএফএসের একাউন্ট রয়েছে। এসব নম্বর নিয়ে হুন্ডি হচ্ছে। প্রতিটি নম্বর ধরে তদন্ত হচ্ছে। পাশাপাশি সন্দেহজনক লেনদেন হওয়া একাউন্টগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। অর্থ পাচার ঠেকাতে সিআইডি ও বিএফআইইউ একসঙ্গে কাজ করছে। এখন থেকে এ ব্যাপারে কঠোর মনিটরিং করা হবে। সিআইডির তথ্য অনুযায়ী, হুন্ডির মাধ্যমে গত এক বছরে পাচার হয়েছে ৭৮০ কোটি ডলার বা ৭৫ হাজার কোটি টাকা। এই সময়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে হুন্ডি কারবারে জড়িত অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।
এদিকে দেশে অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে কাজ করে বিএফআইইউ। ডিজিটাল হুন্ডি লেনদেনে জড়িত সন্দেহে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা (এমএফএস) এজেন্ট বাতিলসহ অনেকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রতিনিয়ত এ বিষয়ে নানা তথ্য সরবরাহ করছে বিএফআইইউ। পাশাপাশি সহযোগিতা করছে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোও। অর্থ পাচার ঠেকাতে প্রতিদিন গড়ে দুই শতাধিক এমএফএস হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। হুন্ডি লেনদেনে জড়িত সন্দেহে ৪ হাজার ৮৫৩টি এমএফএস এজেন্ট বাতিল করা হয়েছে। এ পর্যন্ত এসংক্রান্ত অভিযোগে ৫ হাজার ৭৬৬ জন এজেন্টের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ রয়েছে সিআইডিতে।
অবৈধ হুন্ডি, গেমিং, বেটিং, ক্রিপ্টো ট্রেডিং-সংক্রান্ত বিষয়ে এরই মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে মোট ৮১৪টি ওয়েবসাইট, ১৫৯টি অ্যাপ, ৩৩৭টি ফেসবুক পেজ, দুটি ইনস্টাগ্রাম পেজ এবং ১০৩টি ইউটিউব লিংক। এগুলোর বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে এসংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করেছে বিএফআইইউ।
টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, এমটিএফইর মাধ্যমে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাদের কেউ আমাদের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছেও কেউ যাননি। তারা সবাই হুন্ডির মাধ্যমে এই টাকা দিয়েছেন। তারা তো প্রথমেই অবৈধ সুবিধা পেতে অন্যায় করেছেন। রাতারাতি ধনী হওয়ার জন্য কেউ তো অন্যায় পথ বেছে নিতে পারেন না। আইনের দৃষ্টিতে তো এটা অপরাধ।
বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা বলেন, অবৈধ হুন্ডি, অনলাইন গ্যাম্বলিং, গেমিং, বেটিং, ফরেক্স ও ক্রিপ্টো ট্রেডিংয়ের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। এর মাধ্যমে মুদ্রা পাচার হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব ব্যবহারে সামাজিক অবক্ষয় ও যুবসমাজ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশ। এজন্য আমরা অবৈধ লেনদেনে জড়িতদের শনাক্ত করার কাজ চলছে।
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post