পৃথিবীর ১৭২টি দেশে এক কোটির বেশি প্রবাসী আছেন, যার সিংহভাগই থাকেন মধ্যপ্রাচ্যে। এর মধ্যে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ওমান, কাতার ও কুয়েতের মতো দেশগুলোতে বাংলাদেশি বেশি। প্রায় প্রতিদিন অনেক প্রবাসী এসব দেশ থেকে বিমান যোগে দেশে আসেন। অনেকে ছুটি শেষে আবার বিমানে করে ফেরত যান। সারা বছরই এমন যাতায়াত চলে। এসব যাত্রীর প্রায় ৮০ ভাগই বহন করছে বিদেশি বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। ফলে আমাদের রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের আয় করা মূল্যবান ডলার চলে যাচ্ছে অন্য দেশে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসরকারি মলিকানার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালনা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, কাতারের দোহা, সৌদি আরবের দাম্মাম, রিয়াদ, জেদ্দা, মদিনা, কুয়েত ও ওমানে। আর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ওমান, কাতার, দুবাই ও শারজাহ্ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে।
সাধারণত যেকোনো দেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুই দেশের সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে উভয়পক্ষ ফ্লাইট স্লট নির্ধারণ করে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো যত ফ্লাইট অপারেট করে, দেশি এয়ারলাইন্সগুলোরও একইভাবে তত ফ্লাইট অপারেট করার কথা। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যদি কাতারে দৈনিক ১০টি ফ্লাইট যায় তাহলে বিমান ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স মিলে পাঁচটি ফ্লাইট অপারেট করবে এবং কাতারের এয়ারলাইন্স বাকি পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে, নিজেদের সক্ষমতা না থাকায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হচ্ছে না
ঢাকা থেকে মধ্যপ্রাচ্যের জনপ্রিয় এসব রুটে আধিপত্য বিস্তার করছে ১১টি বিদেশি এয়ারলাইন্স। সেগুলো হচ্ছে— এয়ার অ্যারাবিয়া, ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ, এমিরেটস এয়ারলাইন্স, ফ্লাই দুবাই, সৌদি আরবের সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইন্স (সাউদিয়া), কুয়েতের জাজিরা এয়ারওয়েজ, কুয়েত এয়ারওয়েজ, বাহরাইনের গালফ এয়ার, ওমানের সালাম এয়ার, ওমান এয়ার, কাতার এয়ারওয়েজ। এছাড়া জর্ডানের রয়াল জর্ডানিয়ান এয়ারলাইন্সের যাত্রীরা কাতার এয়ারওয়েজের সঙ্গে কোড শেয়ার করে দেশে যাত্রী আনা-নেওয়া করছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা থেকে আবুধাবি রুটে এয়ার অ্যারাবিয়া সপ্তাহে সাতটি, ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ সাতটি (শ্রীলঙ্কান এয়ারলাইন্সের সঙ্গে কোড শেয়ারিং), দুবাই রুটে এমিরেটস প্রতিদিন তিনটি করে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট, ফ্লাই দুবাই প্রতিদিন দুটি করে সপ্তাহে ১৪টি, সাউদিয়া রিয়াদে সপ্তাহে সাতটি, দাম্মামে সাতটি, মদিনায় সাতটি এবং জেদ্দায় ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এছাড়া ঢাকা থেকে কুয়েতে জাজিরা এয়ারওয়েজ সপ্তাহে নয়টি, কুয়েত এয়ারওয়েজ ১২টি, ওমানের সালাম এয়ার ১২টি, ওমান এয়ার সাতটি, কাতারের কাতার এয়ারওয়েজ ২৮টি এবং বাহরাইনের গালফ এয়ার নয়টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
সবমিলিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের এসব রুটে বিদেশি এয়ারলাইন্স পরিচালনা করে সপ্তাহে ১৬৪টি ফ্লাইট। বিপরীতে বাংলাদেশের দুটি এয়ারলাইন্স সপ্তাহে মাত্র ৮০টি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
এর মধ্যে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স দুবাই রুটে সপ্তাহে সাতটি, ওমানে সাতটি, কাতারে সাতটি এবং শারজাহ্তে সাতটি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ঢাকা থেকে আবুধাবি রুটে সপ্তাহে ছয়টি, দুবাইয়ে সাতটি, শারজাহতে পাঁচটি, সৌদি আরবের দাম্মামে পাঁচটি, রিয়াদে ছয়টি, জেদ্দায় সাতটি, মদিনায় চারটি, কুয়েতে তিনটি, কাতারে চারটি এবং ওমানে পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করে।
বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বেসরকারি মলিকানার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালনা করছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি, দুবাই, শারজাহ, কাতারের দোহা, সৌদি আরবের দাম্মাম, রিয়াদ, জেদ্দা, মদিনা, কুয়েত ও ওমানে। আর ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ওমান, কাতার, দুবাই ও শারজাহ্ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে
সাধারণত যেকোনো দেশে ফ্লাইট পরিচালনার জন্য দুই দেশের সমঝোতা চুক্তির মাধ্যমে উভয়পক্ষ ফ্লাইট স্লট নির্ধারণ করে। বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলো যত ফ্লাইট অপারেট করে, দেশি এয়ারলাইন্সগুলোরও একইভাবে তত ফ্লাইট অপারেট করার কথা। অর্থাৎ বাংলাদেশ থেকে যদি কাতারে দৈনিক ১০টি ফ্লাইট যায় তাহলে বিমান ও ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স মিলে পাঁচটি ফ্লাইট অপারেট করবে এবং কাতারের এয়ারলাইন্স বাকি পাঁচটি ফ্লাইট পরিচালনা করবে। তবে, নিজেদের সক্ষমতা না থাকায় বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি সম্ভব হচ্ছে না।
যদি রিজেন্ট এয়ারওয়েজ ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ অপারেশনে থাকত তাহলে পরিস্থিতি হয়ত ভিন্ন হতো। ২০২০ সালের মার্চ মাসে অপারেশন বন্ধের আগে রিজেন্ট এয়ারওয়েজ মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, কাতার ও সৌদি আরবের দাম্মামে ফ্লাইট পরিচালনা করত। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ দুবাই, সৌদি আরবের জেদ্দা এবং ওমানে ফ্লাইট পরিচালনা করত। কোভিডের আগ মুহূর্তে একসঙ্গে দুটি উড়োজাহাজ মেরামতের জন্য এবং একটির ইঞ্জিন পরিবর্তনের কারণে হঠাৎ করে অপারেশন বন্ধের ঘোষণা দেয় রিজেন্ট। এরপর আর ফিরে আসতে পারেনি তারা।
অপরদিকে, ২০১৬ সালে দুই সপ্তাহের জন্য অপারেশন বন্ধের ঘোষণা দিয়েছিল ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ। তবে, সাত বছরেও ফিরে আসতে পারেনি তারা। ইউনাইটেডের শেয়ার হোল্ডারদের বাঁচাতে ২০২১ সালে পুরোনো পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন বোর্ডকে দায়িত্ব দেয় বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড স্টক এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। দায়িত্বে এসেই তারা বেবিচকের দেনার ৩৫৫ কোটি (সারচার্জ) টাকা মওকুফের আবেদন করে আবারও ফ্লাইট পরিচালনা করতে চায়। তবে, অর্থ মন্ত্রণালয় সেই আবেদন নাকচ করে দিলে অলিখিতভাবে চিরতরে বন্ধ হয়ে যায় ইউনাইটেডের কার্যক্রম।
সক্ষমতার অভাবের কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বিদেশিদের মতো এত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। সরকারের উচিত দেশীয় বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলার মতো এয়ারলাইন্সগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাই করত। তারা ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়ায় এ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। আরও দুটো এয়ারলাইন্স থাকলে সবমিলিয়ে ফ্লাইট সংখ্যা বেড়ে যেত। আপাতত এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ দেখছি না। __এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ও বিশিষ্ট এভিয়েশন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, সক্ষমতার অভাবের কারণে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বিদেশিদের মতো এত ফ্লাইট পরিচালনা করতে পারছে না। সরকারের উচিত দেশীয় বিমান বাংলাদেশ ও ইউএস-বাংলার মতো এয়ারলাইন্সগুলোর সক্ষমতা বাড়াতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া। রিজেন্ট ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজ মধ্যপ্রাচ্যে ফ্লাই করত। তারা ফ্লাইট পরিচালনা বন্ধ করে দেওয়ায় এ ভারসাম্যহীনতা দেখা দিয়েছে। আরও দুটো এয়ারলাইন্স থাকলে সবমিলিয়ে ফ্লাইট সংখ্যা বেড়ে যেত। আপাতত এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ দেখছি না।
বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে উৎসাহিত করছি। অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট পরিচালনাকারী অনেক এয়ারলাইন্সকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাতে বলেছি। যেহেতু আমাদের দেশের এয়ারলাইন্সের এত ক্যাপাসিটি নেই, তাই বিদেশিরা বেশি অপারেট করছে (বেশি ফ্লাইটে বেশি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে)। দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো যদি নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারে তাহলে এ সুযোগ তারাও পাবে।
সক্ষমতার, উপায় কী
দেশীয় এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বাড়াতে নানা রকম পদক্ষেপ নেওয়া হলেও প্রধান কয়েকটি সমস্যার সমাধান ছাড়া আদৌ সক্ষমতা বাড়বে কি না— এ বিষয়ে সন্দেহ থেকে যায়। এভিয়েশন অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এওএবি) নেতারা এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কয়েকটি অন্তরায় তুলে ধরেন। ঢাকা পোস্টকে তারা জানান, ২০১৭ সালে জাতীয় বেসামরিক বিমান চলাচল আইন প্রণীত হয়। কিন্তু সেই আইনের আলোকে প্রয়োজনীয় নীতি ও সিভিল এভিয়েশন আদেশগুলো অপর্যাপ্ত ও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। পাশাপাশি বাংলাদেশে অতি মূল্যায়িত জেট ফুয়েলের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের সামঞ্জস্য না থাকা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তুলনায় অত্যধিক অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ, বার্ষিক ৭২ শতাংশ সারচার্জ এবং এয়ারলাইন্সের যন্ত্রাংশ আমদানিতে উচ্চ করহার আরোপ— এসব বিষয় এয়ার অপারেশনে এক ধরনের প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।
আমরা দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসে তাদের সক্ষমতা বাড়াতে উৎসাহিত করছি। অভ্যন্তরীণ রুটের ফ্লাইট পরিচালনাকারী অনেক এয়ারলাইন্সকে আন্তর্জাতিক রুটে ফ্লাইট চালাতে বলেছি। যেহেতু আমাদের দেশের এয়ারলাইন্সের এত ক্যাপাসিটি নেই, তাই বিদেশিরা বেশি অপারেট করছে (বেশি ফ্লাইটে বেশি যাত্রী নিয়ে যাচ্ছে)। দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো যদি নিজের সক্ষমতা বাড়াতে পারে তাহলে এ সুযোগ তারাও পাবে __বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান
তারা আরও জানান, একটি এয়ারলাইন্সের পরিচালনা ব্যয়ের প্রায় ৫০ ভাগই খরচ হয় জেট ফুয়েল কিনতে। বিশ্ববাজারে যখন জেড ফুয়েলের দাম বেড়ে যায়, তখন আমাদের দেশেও তা বাড়ানো হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে যখন দাম কমে তখন আমাদের এখানে কমানো হয় না। জেট ফুয়েল শুধু পদ্মা অয়েলের কাছ থেকে কেনা যায়। এছাড়া বেবিচকের আরোপ করা অ্যারোনটিক্যাল ও নন-অ্যারোনটিক্যাল চার্জ অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি। পাশাপাশি তারা চার্জের বকেয়া পাওনার ওপর মাসিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ বছরে ৭২ শতাংশ হারে সারচার্জ আরোপ করে চক্রবৃদ্ধি হারে পাওনা আদায় করে। এ মাত্রাতিরিক্ত সারচার্জ এয়ারলাইন্সকে দেনার চাপে ফেলে দিচ্ছে।
এসব বিষয়ে সমাধান চেয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে চিঠি দিয়েছে এওএবি। তবে, এতে পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি।
মোটা অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা হারাচ্ছে বাংলাদেশ
বিদেশি এয়ারলাইন্স দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের গন্তব্যগুলোতে যাতায়াত করার কারণে প্রবাসীদের আয় করা রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ সেসব দেশে চলে যাচ্ছে। তবে, কত টাকা যাচ্ছে এ বিষয়ে কোনো হিসাব নেই কারও কাছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের জন্য আকাশপথে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে (সব আন্তর্জাতিক রুট মিলে)। যার ৭৫ শতাংশই বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ আর ইউএস-বাংলার কাছে আসছে মাত্র ২৫ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ একটি বৃহৎ মার্কেট। এ মার্কেটকে নিজেদের করে নিতে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত এখনই দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স রিটেইন-এর (ধরে রাখার) ব্যবস্থা করা।
এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে বিভিন্ন চার্জের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। পাশাপাশি বেবিচকের পাওনার সারচার্জও অনেক বেশি। বিভিন্ন সময় আমরা সারচার্জের বার্ষিক হার ৭২ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাসে ১ শতাংশ এবং বছরে ১২ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি দেশে জেট ফুয়েলের দামও মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ থেকে বেশি। এর ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভিন্ন ভিন্ন তেলের দাম। এতে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায়। এসব কারণে চাইলেও এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয় না __ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম
বাংলাদেশের জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরব গেছে ছয় লাখ ১২ হাজার ৪১৮ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে এক লাখ এক হাজার ৭৭৫ জন, কুয়েতে ২০ হাজার ৪২২ জন, ওমানে এক লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ জন এবং কাতারে ২৪ হাজার ৪৪৭ জন।
কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, বাংলাদেশের সিভিল এভিয়েশন আইনটি এয়ারলাইন্স ফ্রেন্ডলি নয়। আইনগুলো এয়ারলাইন্স ফ্রেন্ডলি করতে হবে যাতে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো বেড়ে উঠতে পারে। সিভিল এভিয়েশনের নিয়মনীতির জালে পড়ে দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলো এগোতে পারছে না, যারা এগিয়ে ছিল তারাও বন্ধ হয়ে গেছে। কাজেই সিভিল এভিয়েশনের উচিত মন্ত্রণালয় ও বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোর সঙ্গে বসে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) মো. কামরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে দেশীয় এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানোর জন্য অবশ্যই তাদের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। তবে, কিছু কিছু সমস্যা সক্ষমতা বাড়ানোর অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে বিভিন্ন চার্জের অসামঞ্জস্যতা রয়েছে। পাশাপাশি বেবিচকের পাওনার সারচার্জও অনেক বেশি। বিভিন্ন সময় আমরা সারচার্জের বার্ষিক হার ৭২ শতাংশ থেকে কমিয়ে মাসে ১ শতাংশ এবং বছরে ১২ শতাংশ নির্ধারণের দাবি জানিয়েছি। পাশাপাশি দেশে জেট ফুয়েলের দামও মধ্যপ্রাচ্যের সব দেশ থেকে বেশি। এর ওপর অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ভিন্ন ভিন্ন তেলের দাম। এতে এয়ারলাইন্সগুলোর পরিচালন ব্যয় বেড়ে যায়। এসব কারণে চাইলেও এয়ারলাইন্সের সক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয় না।
বাংলাদেশের জন্য আকাশপথে ২০ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে (সব আন্তর্জাতিক রুট মিলে)। যার ৭৫ শতাংশই বিদেশি এয়ারলাইন্সগুলোর কাছে চলে যাচ্ছে। বিমান বাংলাদেশ আর ইউএস-বাংলার কাছে আসছে মাত্র ২৫ শতাংশ। সংখ্যার দিক থেকে আকাশপথে যাত্রী পরিবহনে বাংলাদেশ একটি বৃহৎ মার্কেট। এ মার্কেটকে নিজেদের করে নিতে বিশ্বের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনা করতে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সরকারের উচিত এখনই দেশীয় এয়ারলাইন্সগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা বাড়িয়ে রেমিট্যান্স রিটেইন-এর (ধরে রাখার) ব্যবস্থা করা
উইজ এয়ারকে আটকে দিয়েছে বেবিচক
মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন রুটে ১১টি এয়ারলাইন্স ফ্লাইট পরিচালনা করে। এরপরও সম্প্রতি বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনার অনুমতি চায় আবুধাবিভিত্তিক পৃথিবীর অন্যতম কম ভাড়ার (লো-কস্ট) এয়ারলাইন্স সংস্থা উইজ এয়ার। এয়ারলাইন্সটি প্রাথমিকভাবে চট্টগ্রাম থেকে আবুধাবি এবং ভবিষ্যতে ঢাকা থেকে আবুধাবি রুটে ফ্লাইট চালানোর অনুমতি চেয়েছিল। তবে, উড়োজাহাজ রাখার জায়গার সংকট দেখিয়ে তাদের অনুমতি দেয়নি বেবিচক।
সূত্র: ঢাকা পোষ্ট
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post