‘বিপদে পরলে বাঘ আর হরিণ এক ঘাটে পানি খায়’ এমন প্রবাদ থাকলেও বাস্তব চিত্রও ভিন্ন নয়। চাপে পরে মানুষ অনেক কিছুই করে। তবে কোনো কাজ যদি কেউ চাপে পরে করার চেয়ে আন্তরিকতা দিয়ে করে, সেক্ষেত্রে যেমনিভাবে ব্যক্তি নিজে শান্তি পায়, ঠিক তেমনিভাবে ওই কাজের কারণে মানুষও সন্তোষজনক উপকৃত হয়। বলছিলাম ঢাকা বিমানবন্দরের কথা। প্রতিনিয়ত সংবাদ পরিবেশনের কারণে অবশেষে চাপের মুখে পরে চিত্র পাল্টাতে শুরু করেছে দেশের সবচেয়ে বড় এই বিমানবন্দরের। লাগেজ নিয়ে ভোগান্তি, ট্রলি শঙ্কট, গাড়ি নিয়ে হয়রানি সহ নানা অভিযোগ ছিলো প্রবাসীদের। তবে বর্তমানে এই সব সমস্যার অধিকাংশই সমাধানের পথে।
পূর্বে বিদেশের বিভিন্ন দেশ থেকে যাত্রীকে ঢাকায় নিয়ে এলেও লাগেজ ফেলে আসা যেন স্বাভাবিক ঘটনায় দাঁড়িয়েছিল বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর ক্ষেত্রে। মূলত মধ্যপ্রাচ্য থেকে স্বল্প মূল্যে (লো কস্ট ক্যারিয়ার) আসা ফ্লাইটগুলোর যাত্রীরাই হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে লাগেজ না পাওয়ার অভিযোগগুলো করতেন। একসময় প্রায় প্রতি ফ্লাইটেই ৩০-৫০ যাত্রীর বেলায় এমন ঘটনা ঘটতে থাকে। তাই এ অবস্থা থেকে উত্তরণে অভিযুক্ত এয়ারলাইনসগুলোর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)। এতে ফলও দিয়েছে বেশ, বর্তমানে শাহজালাল বিমানবন্দরে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর লাগেজ লেফট বিহাইন্ড বা যাত্রীর সঙ্গে তার লাগেজ নির্ধারিত গন্তব্যে না পৌঁছনোর ঘটনা নেমে এসেছে শূন্য দশমিক ১ শতাংশে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এয়ারলাইনসগুলোর অনিচ্ছাকৃত কারণেও অনেক ক্ষেত্রে যাত্রীর লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়। বিশেষ করে ট্রানজিট যাত্রীর ক্ষেত্রে দুই ফ্লাইটের মধ্যবর্তী সময় যদি কম হয় সেক্ষেত্রে লাগেজ ছাড়াই যাত্রী নিয়ে আসে এয়ারলাইনসগুলো। সেক্ষেত্রে পরবর্তী ফ্লাইটে ওই যাত্রীর লাগেজ আনার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া হঠাৎ করে আবহাওয়া খারাপ হলেও অতিরিক্ত জ্বালানি নিতে গিয়ে কিছু যাত্রীর লাগেজ রেখে আসতে বাধ্য হয় এয়ারলাইনসগুলো। সেই সঙ্গে কারিগরি ত্রুটি, মিস হ্যান্ডলিং, ভুল ট্যাগিংসহ নানা কারণে লাগেজ লেফট বিহাইন্ড হয়ে থাকে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যাত্রীর লোড ফ্যাক্টর ম্যানেজ করতে স্বেচ্ছায় লাগেজ লেফট বিহাইন্ড করে এয়ারলাইনসগুলো।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক সময়ে সালাম এয়ার, ওমান এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, কাতার এয়ারওয়েজ, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনস, এমিরেটস, ইতিহাদ, ফ্লাই দুবাই, এয়ার অ্যারাবিয়া, গালফ এয়ার, কুয়েত এয়ারওয়েজের ক্ষেত্রে ব্যাগেজ লেফট বিহাইন্ড বেশি হচ্ছিল। তাই এটি বন্ধে বিদেশী এয়ারলাইনসগুলোর সঙ্গে গত জুন থেকে কয়েক দফা বৈঠক করে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে এয়ার অ্যারাবিয়া, জাজিরা এয়ারওয়েজ ও সালাম এয়ারের নির্দিষ্ট মেয়াদে ফ্লাইট ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে দেয়া হয়।
ফ্লাইটপ্রতি ২০ যাত্রী কম আনতে আসনসীমা বেঁধে দেয়া হয় এয়ার অ্যারাবিয়াকে। আবার কয়েকটি এয়ারলাইন নিজ উদ্যোগেই ফ্লাইটপ্রতি ২০-৩০টি আসন ফাঁকা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। এর ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এয়ারলাইনসগুলোর ব্যাগেজ লেফট-বিহাইন্ড নেমে এসেছে প্রায় শূন্যের কোটায়। বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্বের ৩১টি এয়ারলাইনস এর মাধ্যমে দৈনিক ঢাকা বিমানবন্দরে আসেন প্রায় ২২ হাজার যাত্রী। এর মধ্যে অধিকাংশই প্রবাসী। বিমানবন্দরের সেবা উন্নত করার লক্ষে প্রতিনিয়ত কাজ করছে কর্তৃপক্ষ। প্রবাসীদের হয়রানি করলে নেওয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থা। আর তাই, কোনো প্রবাসী হয়রানীর শিকার হলে তাৎক্ষনিক অভিযোগ দিতে পারেন বিমানবন্দরে দায়িত্বরত আর্মড পুলিশের কাছে।
আরো পড়ুন:
বাংলাদেশের উন্নয়নের প্রশংসায় সৌদি মন্ত্রী
আমিরাতে ক্ষুদ্র ব্যবসায় বিনিয়োগে আগ্রহী হচ্ছেন প্রবাসীরা
কুয়েতে বিশ্ব কুরআন প্রতিযোগিতায় ফাইনাল রাউন্ডে নির্বাচিত তিন
পায়ুপথে স্বর্ণ এনে বিমানবন্দরে দুই প্রবাসী গ্রেফতার
ওমান থেকে বিমানের ফ্লাইট বিপর্যয়, ভোগান্তিতে শতাধিক প্রবাসী
প্রবাস টাইমে লিখুন আপনিও। প্রবাসে বাংলাদেশি কমিউনিটির নানা আয়োজন, ঘটনা-দুর্ঘটনা, প্রবাসীদের সুযোগ-সুবিধা, সমস্যা-সম্ভাবনা, সাফল্য, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের খবর, ছবি ও ভিডিও আমাদের পাঠাতে পারেন [email protected] মেইলে।
Discussion about this post